খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন এনডিসি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনাদের কাছে সেবা নিতে আসা জনসাধারণকে হাসিমুখে সেবা দিন। ২০ ডিসেম্বর তিনি যশোরের চৌগাছা উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও সুধীসমাজের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ওই সভায় তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি এই নির্দেশনা দেন। যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
তিনি বলেন, দেশের খেটে খাওয়া অসহায় বঞ্চিত এবং গ্রামে-গঞ্জে থাকা মানুষের সেবা করাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব থেকে বড় দায়িত্ব। আমরা বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্য করি সরকারি অফিসে জনসাধারণ সেবা নিতে আসলে কর্মকর্তাদের মুখটা কালো হয়ে যায়। এটা যেন না হয়। আপনারা হাসিমুখে জনসাধারণকে সেবা দেবেন।
আসল কথা হলো এই দেশের গরিব মানুষ যারা এখনো তৃণমূলে পড়ে আছেন তারাই এ দেশের মালিক। আর তাদের ঘর থেকে সবাই লেখাপড়া শিখে আজ ওপরে উঠে এসেছেন। কাজেই সে দিকে লক্ষ্য রেখে সেবা করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবা করা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রধান দায়িত্ব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় গরিব কৃষক, গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়িতে চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন। ওরাই মালিক।’
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন অল্প কথায় একটি কালজয়ী বক্তৃতা করেছেন। যার তুলনা নেই। এদেশে সাধারণ মানুষের সিংহভাগ গ্রামে বাস করেন এবং তারা কৃষক। বিভাগীয় কমিশনারের কথায় তাদের সবচেয়ে সম্মান পাওয়ার কথা। কিন্তু আমরা দেখছি তার উল্টোটা। তাদের প্রতি খুবই অবহেলা করা হয়। করা হয় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য। কোনো কাজে কাউকে যদি স্মার্ট মনে না হয় তাহলে তাকে তাচ্ছিল্য করা হয় গেয়ো মানুষ বলে। শেকড় ভোলা জাতির কপালে কি আছে আল্লাহই মালুম।
আজো আমাদের দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ আছে। ৬৮ হাজার গ্রাম জুড়ে কৃষক আছে। কৃষিতে প্রযুক্তির ছোয়া লেগেছে তারপরও কৃষি পণ্য আমদানি করতে হয়। কৃষকদের মর্যাদা দিতে না পারার ফল এটি। আমাদের বাপ-দাদাদের সফলতার পেছনে পরিশ্রমের অংশ হিসেবেও রয়েছে পাপমুক্ত কৃষি খাত। অন্য যেকোনো খাতে দুর্নীতি অনাচার করার সুযোগ আছে। কিন্তু এই কৃষি পেশায় কোনো দুর্নীতি নেই। নেই কোনো ধান্দাবাজীর সুযোগও। এখানে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে শ্রম দিলে ফসল ঘরে ওঠে। অর্থাৎ নিষ্পাপ উপার্জনের মাধ্যম এটি।
প্রচন্ড তাপদাহে প্রকৃতি যখন পোড়ে, জীবকুলের যখন ওষ্ঠাগতপ্রাণ তখন যারা এসি রুমে বসে শীত শীত অনুভব করে আর সুখ নিদ্রার মাঝে জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে তাদের ওই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হবে যদি এদেশের সাধারণ মানুষকে মূল্যায়ন করা না হয়।
বিভাগীয় কমিশনার যে বক্তৃতা করেছেন, তার জন্য তাকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমরা আশা করবো সব সরকারি কর্মকর্তারা-কর্মচারী তার এ বক্তৃতা অনুসরণ করে ধন্যবাদাহ্য হোক।