কল্যাণ ডেস্ক ।। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হলে সংসদ সদস্য পদও হারাতে পারেন মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়া ডা. মুরাদ হাসান। বিষয়টি নির্ধারিত হবে আওযামী লীগের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়।
সংবিধান অনুযায়ী কোনো দল থেকে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য সেই দলের প্রাথমিক সদস্য পদ হারালে তিনি আর সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারেন না। অথবা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলে এবং তিনি বিচারিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়।
মন্ত্রীসভা থেকে সদ্য পদত্যাগী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ায় মুরাদ হাসানকে সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভা থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়ার পর এখন আওয়ামী লীগ থেকেও তার বহিষ্কার নিয়ে আলোচনা চলছে। তাই তার সংসদ সদস্য পদও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্যকে নিয়ে দেয়া বক্তব্য এবং এক চিত্র নায়িকার সঙ্গে ফোনে ডা. মুরাদ হাসানের কথা বলার ভিভিও-অডিও সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু এই বিষয়টি নয়, এর বাইরেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য ও মন্তব্য করে সম্প্রতি তিনি আলোচনা-সমালোচনায় উঠে এসেছেন।
এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়েও কুরুচীপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যে ভিডিও ও অডিওগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলো ডা. মুরাদ হাসানের বলে সরকার ও আওয়ামী লীগ নিশ্চিত হয়েছে। আর তা নিশ্চিত হওয়ার পরই সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভা থেকে মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও মুরাদ হাসান তার ওই সব বক্তব্যে নারী বিদ্বেষ এবং অশ্লীল ভাষা ও শব্দ ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে নারীর প্রতি চরম অবমাননা প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি ওই চিত্র নায়িকা তার (মুরাদের) নির্দেশ না মানলে বল প্রয়োগ ও সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে ব্যবহারের হুমকিও দেন ফোনে।
এসব ঘটনায় সরকার ও আওয়ামী লীগ বিব্রত ও অস্বস্থিতে পড়ে। এই ধরনের একজনকে দলের রাখা হবে কি না তা নিয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। এর আগে মন্ত্রী সভা থেকে বাদ পড়ার পর প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কার হন ও তার সংসদ সদস্য পদ চলে যায়।
রেডিসনে আত্মগোপনে ছিলেন মুরাদ
কলরেকর্ড ফাঁসের পর সোমবার দুপুরে কাউকে না জানিয়েই চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে এসেছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। পরে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আসলে কাউকে না জানিয়েই গভীর রাতে হোটেল ছাড়েন।
মঙ্গলবার বিকেলে রেডিসন ব্লু হোটেলের ব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা রাফাত সালমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
জামালপুর থেকে বহিষ্কার
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট, অগঠনতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকা-ে সম্পৃক্ততার অভিযোগে’ মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন।
দল থেকে বহিষ্কার হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে মুরাদের সংসদ সদস্য পদ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।
মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ, মামলার অপেক্ষা
বিতর্কিত মন্তব্য ও অডিও রেকর্ড ফাঁসের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মঙ্গলবার দুপুরে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি, দুই দলের অঙ্গসংগঠন এবং নারী বিষয়ক সংগঠনগুলো। নানামুখী চাপের মধ্যে সোমবার রাতে ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম যান মুরাদ। অবশ্য তার সর্বশেষ অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি উতরে ওঠার আগেই আরেকটি দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে তার জন্য। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ‘হারানো’ ডা. মুরাদ এবার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। শিগগিরই তাকে ডাকা হতে পারে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে। আর মামলা হলে সাথে সাথেই ডাক পড়বে তার।
ডিবির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চরিত্রহনন বা ফোনালাপে অশ্লীলতার বিষয়ে এখনো কেউ মামলা করেনি। মামলা করলে আমরা ডা. মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলা ছাড়াই ডিবি কিছু ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে। তদন্তের কোনো পর্যায়ে যদি প্রয়োজন মনে করি তাহলে ডা. মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
উপস্থাপক নাহিদের খোঁজে নামছে ডিবি
ফেসবুকে যে অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ের উদ্দেশ্যে অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য করে ফেঁসেছেন ডা. মুরাদ হাসান, ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
নাহিদ রেইন্স পিকচার্স নামের একটি ফেসবুক পেজে লাইভ অনুষ্ঠানে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা মুরাদ হাসান। ‘অসুস্থ খালেদা, বিকৃত বিএনপির নেতাকর্মী’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটি যিনি উপস্থাপনা করছিলেন তার নাম নাহিদ।
মুরাদ হাসানের আপত্তিকর মন্তব্যগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তখন থেকে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নাহিদের নাম।