শাহোকা শফি মাহমুদ: যশোর শহরের নীল রতন ধর রোড, যার ব্যাপ্তি জিলা স্কুল ও সার্কিট হাউসের সামনে মুজিব সড়ক থেকে রাসেল চত্বর (দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সড়ক- রেল রোড) পর্যন্ত। এই রোডের পাশে অনেকগুলো সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পশ্চিম দিক থেকে হাঁটলে প্রথমে ডান পাশে ভোলা ট্যাঙ্ক, তার পাশে নব কিশলয় শিশু শিক্ষালয়। এভাবে ডানে বাম রয়েছে কাস্টমস অফিস, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, টাইলস,থাই অ্যালুমিনিয়াম ও ফার্নিচার মার্কেট, বীমা অফিস, ওয়ার্কার্স পার্টি ও দৈনিক সত্যপাঠ অফিস, ফায়ার ব্রিগেড, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, কৃষিব্যাংক, আবদুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমি, নিরালা সিনেমা হল ও দাদাভাই তেল মিল (বর্তমানে বন্ধ) যশোর বালিকা বিদ্যালয় অবস্থিত। এ সড়কের পাশে অবস্থিত সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম, যশোরের অন্যতম দানশীল ব্যক্তিত্ব আহাদ আলী, প্রয়াত সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালেদুর রহমান টিটো ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মান্নান সিদ্দিকীর বাসভবন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নাম কেন নীলরতন ধর হলো। কে এই নীল রতন। কোথায় তার বাড়ি এবং কি তার পরিচয়। দৈনিক কল্যাণের কাছেও এমন প্রশ্নটি বার বার আসে।
নীলরতন ধর যশোরেরই কৃতী সন্তান। তিনি ১৮৯২ সালের ২ জানুয়ারি যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন। তাঁর বাবার নাম অ্যাডভোকেট প্রসন্ন কুমার ধর। তাঁর অন্য ভাইদের মধ্যে উকিল অমূল্য রতন ধর, রাজনীতিবিদ ডা. জীবন রতন ধর, ডা. দুর্গারতন ধর এমআরসিপি সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রের পথিকৃৎ বিজ্ঞানী অধ্যাপক নীলরতন শিক্ষাজীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বস্তরেই প্রথম স্থান অধিকার করেন। এমএসসি-তে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড নম্বর পেয়ে কুড়িটি স্বর্ণপদক, গ্রিফিথ পুরস্কার ও এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১৫ সালে স্টেট স্কলারশিপ পেয়ে বিলেত যান। ১৯১৭ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯১৯ সালে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৯ সালে লন্ডনে ফিরে আইইএস নির্বাচিত হয়ে এলাহাবাদ ম্যুর সেন্ট্রাল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তাঁর গবেষণা জীবনের প্রথম কাজ ‘ইনডিউসড অ্যান্ড ফটো-কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন’। শেষ জীবনেও তিনি নাইট্রোজেন ফিকশন নিয়ে গবেষণায় রত ছিলেন। তাঁর মৌলিক গবেষণাপত্রের সংখ্যা ছয়শতাধিক। ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত। তিনি পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডক্টরেট এবং এস এ হিল ও জি হিল স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৩৮, ১৯৪৭ ও ১৯৫২ সালে নোবেল পুরস্কার কমিটিতে তিনি বিচারক ছিলেন। তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব দিতে চাইলে তিনি তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন।
তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হলো : আমাদের খাদ্য, জমির উর্ববতা বৃদ্ধির উপায়, নিট কনসেপশন ইন বায়ো কেমিস্ট, ইনফ্লুয়েন্স অব লাইট ইন সাম বায়ো-কেমিক্যাল প্রসেস ইত্যাদি।