নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্ত দিয়ে প্রায়ই মাদকের বড় বড় চালান ঢুকছে। ভারতের হাসনাবাদ, টাকি, বশিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁও, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রানাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদীয়া, মালদহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ ও নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক প্রবেশ করে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে। আর ১১ পয়েন্টের বিপরীতে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে মাদকের চালান প্রবেশ করে। এরমধ্যে যশোরে ভারতের বনগাঁ হয়ে ফেনসিডিল পাচারের একটি শক্তিশালী রুট হয়েছে। এছাড়া উচ্চমূল্যের মদ ও গাঁজা এখান থেকেই আবার দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠানো হয়। এসব পুলিশ প্রশাসনের অজানা নয়। মাঝে মাঝে মাদকসহ বহনকারীদের তারা আটক করলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মূল হোতারা। ফলে কখোনই কার্যকর কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয় না।
একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, যশোরের সীমান্তবর্তী সাদীপুর ঘাটের বাবু মেম্বর মাদকের চালান আনে। তার কাছ থেকে যশোর শহরের রেজা নিয়ে আসে। সে পুটখালী সীমান্ত থেকেও মাদকের চালান নিয়ে আসে। আবার সে ওই মাদকের চালান মাগুরা, খুলনা, নড়াইল এবং ঢাকায় পৌঁছে দেন বলে প্রচার রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনাপোলের বালুন্ডা সীমান্ত দিয়ে বাবু মাদকের চালান পারাপার করে থাকে। তবে বাবুর সহযোগিতায় থাকে তারই প্রতিবেশি তরিকুল ইসলাম। বারোপোতার হাবিবুর রহমান ওই এলাকা দিয়ে মাদকের চালান পারাপার করে। কিন্তু বর্তমানে হাবিবুর রহমান জেলহাজতে রয়েছে। কিন্তু তার কয়েকজন সহকর্মী আগের মতই মাদকের চালান আনার কাজ করছে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, যশোরের চাঁচড়া-রায়পাড়ার সজল, ডালিম, হোসেন মরা, সবুজ, মিন্টু, জামতলার মাসুমা, মুরগি রহিম, খোড়া কামরুল, চাঁচড়ার বিল্লাল মেম্বরের ভাইপো বাপ্পা বারোপোতা এবং পুটখালী থেকে মাদকের চালান নিয়ে আসে।
এছাড়া পুটখালী ও সাদীপুর সীমান্তের মাদক রেজার মাধ্যমে যশোরে আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টির হোসেন মরার স্ত্রী আসমা বেগম, জাহেদা, রায়পাড়ার মুরগি রহিমের স্ত্রী রনি, শংকরপুরের প্রিন্স, সাহেদ হোসেন, কালু, মানিক, রায়পাড়ার রমজান, ইসমাইল কলোনির সাগর, স¤্রাট, ভাষা, কুদরত, ইমন, রেলগেট পশ্চিমপাড়ার ডালিম ওরফে নদী, ডালিমের ছেলে আলামিন, ষষ্ঠীতলার রবিউল ইসলাম, ভানু, জবা প্রতিদিন মাদকের চালান এনে কারবার করে। আবার এদের রয়েছে একাধিক দিনমজুর (বাহক)। ওই দিনমজুর দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবদি এই মাদকের কারবার করে থাকে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, উল্লেখিত কারবারীদের মধ্যে অনেকেই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো সমাজের হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল হিসেবে কাজ করে থাকে। তারা সমাজে নিজেদের বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে থাকে। সে কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যেও ওই সব মাদক আমদানিতে কোন কমতি নেই। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনিক নজরদারির কারণে কিছুটা কম হলেও তার দাম উর্দ্ধগতি। বর্তমানে প্রতি বোতল ফেনসিডিল ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে সীমান্ত এলাকায় একটু কমদামে পাওয়া যায়।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) রূপণ কুমার সরকার বলেছেন, মাদক সেবন এবং কারবারি সম্পূর্ণ অবৈধ। তাদের প্রসার বৃদ্ধির ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। তবে এরকম ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেছেন, চলতি মাসে বিভিন্ন সময় মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, গাঁজা এবং মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। একই সাথে আটককৃতদের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলা দেয়া হয়েছে।