বিষয়টি উদ্বেগজনক বটে। বিভিন্ন স্থানে এনজিওর নামে ফটকাবাজির ব্যবসা শুরু হয়েছে। ফটকাবাজরা সাধারণ মানুষকে নানা রকম প্রলোভনে ভুলিয়ে লাখ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিচ্ছে। এ দিকে এসব নিরীহ মানুষের হা-হুতাশ করা ছাড়া কিছুই থাকছে না। বিষয়টি এমনই যে এ ধরনের ঘটনা এক জায়গায় একটি হলে পর পরই অন্য জায়গায় ঘটছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে একটির সাথে যেন আর একটির পূর্ণমাত্রায় যোগসূত্র রয়েছে।
দৈনিক কল্যাণে ২১ ডিসেম্বর খবর প্রকাশ হয়েছে, যশোরের চৌগাছায় ১০ বছরে দ্বিগুণ টাকার লোভ দেখিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে পিডো ও আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা ।
উপজেলার মাড়ুয়া, আড়পাড়া, কান্দি, সৈয়দপুর, কোটালিপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ‘সঞ্চয় ও ডিপিএস’-এ দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে এনজিও দুটি টাকা সংগ্রহ করে লাপাত্তা হয়েছে।
২০১৯ সালে পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা পিডো উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সে সময় সলুয়া বাজারেও তাদের অফিস ছিল। পরে তারা আড়পাড়া বাজারে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। তাদের অর্থ সংগ্রহের রশিদ ও টাকা জমা নেয়ার বইতে পিডো’র ঠিকানা যশোর, রূপদিয়া, সদর যশোর এবং স্থাপিত ১৯৯৮ লেখা আছে। আর আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাইনবোর্ডে অফিসের ঠিকানা যশোর সমবায় মার্কেট লেখা আছে। সংস্থা দুটি প্রায় ৩বছর সঞ্চয় ও ডিপিএস কার্যক্রম চালিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
এর আগে যশোরের চৌগাছায় রূপান্তর সমবায় সমিতি নামে ২০০ দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে ফটকাবাজরা। তালা উপজেলায় ভিশন-২১ নামে এক হায় হায় কোম্পানি কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার চলন্তিকা নামে এক সংস্থা এলাকার মানুষের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা নিয়ে হাওয়া হয়েছে।
দারিদ্র্য পীড়িত মানুষ যখন আয়-উপার্জনের কোনো আশার বাণী শোনে তখন স্বাভাবিক কারণে তারা যেন বাঁচার পথ পায়। এ কারণে এনজিও অথবা এ ধরনের কোনো সংস্থা যখন অফিস হাকিয়ে দৃষ্টি নন্দন আনাগোনা শুরু করে তখন সহজ সরল প্রাণ মানুষ তাদের প্রতি ঝোঁকে। আর এই সুযোগে তারা বাগিয়ে নেয় তাদের রক্ত নিংড়ানো টাকা-পয়সা। এ ভাবে তাদের পকেট ভরলে একদিন লাপাত্তা হয়। এ ভাবে কত মানুষ যে পথে বসছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। এর আগে মানুষ দেখেছে ডেসটিনি, আল-কারিম ও এহসান এস বাংলাদেশ নামে তিনটি সাড়া জাগানো কোম্পানি বা এনজিওর ফটকাবাজি কারবার। ডেসটিনি দেশের কত সম্ভাবনাময় তরুণের যে মাথা বিগড়ে তাদের সর্বনাশ করেছে তা হিসাবের বাইরে। আকাশচুম্বী স্বপ্নের জালে তাদেরকে আটকিয়ে তাদের ভাবষ্যৎ ঝরঝরে করে দিয়েছে। তারা এর পেছনে ছুটে একদিকে চাকরির বয়স হারিয়েছে অন্য দিকে হারিয়েছে অভিভাবকের টাকা-পয়সা। এহসান এস বাংলাদেশ পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ভাঙিয়ে ধর্ম প্রাণ মানুষের পকেট কেটেছে।
দেশ নিশ্চয় আইনের গন্ডিতে আবদ্ধ। কোনো কিছুই আইনের বাইরে চলতে পারে না। যে ফটকাবাজি সংস্থার কথা আজ মিডিয়ায় আসছে সেগুলো আইনের বাইরের কোনো সংস্থা নয়। কিন্তু তাদের ব্যাপারে সেই আইন কেন প্রয়োগ হচ্ছে না কেন এটা সবার প্রশ্ন। যার যখন যা মনে হবে, তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাই করবে তা হতে পারে না। হতে পারে না একটি তথাকথিত সংস্থা দাঁড় করিয়ে এ ভাবে মানুষকে ঠকিয়ে পথের মানুষে পরিণত করা। দেশের যেখানে সেখানে এই ব্যবসা ফেদে এক শ্রেণির ফটকাবাজ, সাধারণ মানুষের অর্থ লুটে নিচ্ছে আর সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবামূলক সংস্থা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।