ভারত-ইউক্রেন-রাশিয়া থেকে আসছে না গম
সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০-১৪ টাকা
সুনীল ঘোষ: যশোর বাজারে সকাল-বিকেল ওঠা-নামা করছে আটা-ময়দার দর। এ কারণে ক্রেতার সাথে বাক-বিত-ার ঘটনা ঘটছে। এসব ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ খুচরা দোকানি খোলা আটা-ময়দা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। সিন্ডিকেট করে আটা-ময়দার দাম বাড়ানো হয়েছে বলে ভোক্তারা জানান। তারা বলেন, সয়াবিন তেল নিয়ে চলেছে তেলেসমাতি। এরপর পেঁয়াজ-রসুনের দাম বেড়েছে হঠাৎ করে। এখন আটা-ময়দার ময়দানে নেমেছে অসাধু মুনাফলোভী ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি গম দিচ্ছে না ভারত। আর আসতে পারছেন ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। পাশাপশি ওএমএস’র আটা বিক্রিও বন্ধ রয়েছে। ফলে আটা-ময়দার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দাবি আটা-ময়দা মজুত গড়ার সুযোগ কম। কারণ ১৫ দিনের মধ্যে আটা-ময়দায় পোকা লেগে যায়।
সরেজমিনে যশোরের বড়বাজারে খুচরা দোকানে খোলা আটা ও ময়দা পাওয়া যায়নি। হাটচান্নির সরকার স্টোরের মালিক মিলন সরকার জানান, আটা ও ময়দার ৫০ কেজির বস্তায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। এই দাম বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মন্তব্য করে মিলন বলেন, চড়াদামের আটা-ময়দা কিনে খুচরা দরে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। ক্রেতার সাথে বাকবিত-া হচ্ছে। এসব ঝামেলা এড়াতে প্যাকেট আটা-ময়দা বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, দোকান খুলে ২/৩ প্যাকেট কিনে আনছি। সেগুলো বিক্রির পর ফের আনছি। দুই কেজি ওজনের প্যাকেট আটা বিক্রি করতে হচ্ছে ৯০ টাকা। দুইশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫ কেজির প্যাকেট। প্যাকেটে দাম লেখা থাকায় ক্রেতার সাথে বাকবিত-া করতে হচ্ছে না।
মুদি ব্যবসায়ী জোতিন পাল বলেন, গত দু’দিনে প্রতিকেজি আটায় বেড়েছে ১০ থেকে ১৪ টাকা। ১৫শ’ টাকার আটার বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২২শ’ টাকা। ২২শ’ টাকার ময়দার দাম উঠেছে ২৯শ’ টাকায়। অস্বাভাবিক দামে আটা-ময়দা কিনে খুচরা বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ফ্রেস, তীঁর ও সিটি গ্রুপের আটা-ময়দা বেশি চলে। কিন্তু একযোগে সব কোম্পানি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যেকারণে প্যাকেটজাত আটা-ময়দা বিক্রি করছি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে খোলা আটা-ময়দা নেই। ক্রেতারা বাধ্য হয়ে চড়া দামে কিনছেন প্যাকেটজাত আটা ও ময়দা। নির্মল নামে এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আটা-ময়দার বস্তায় বেড়েছে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত। তার হিসেব মতে, গত এক সপ্তাহে প্রতিকেজি আটা-ময়দায় বেড়েছে ১৪ টাকা। গত দু’দিনে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা।
হাটখোলা রোডে আটা-ময়দা পাইকারি বিক্রি হয়। এখানকার ব্যবসায়ী সাহা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী নন্দ দুলাল সাহা জানান, আমরা খুলনার মিতালী ও রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের মিল থেকে আটা-ময়দা এনে বিক্রি করি। এখন মিল থেকে ৫০ কেজি ওজনের আটার বস্তা কিনতে হচ্ছে ২২শ’ টাকায়। গত ৪/৫ দিন আগেও যার দাম ছিল ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকা।
সিটি প্লাজার সামনে যশোরের সবচেয়ে বড় পাইকারি ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমেদ জানান, ভারত গম দেয়া বন্ধ করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকেও গম আসছে না। যেকারণে মিলে উৎপাদন কমে গেছে। দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ করছে মিল মালিকরা। খোলা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
আটা কিনতে আসা কেসমত আলী অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ৩০/৩২ টাকা কেজির আটা কিনতে হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা দরে। ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা মিকাইল হোসেন বলেন, প্রশাসনের নজরদারি নেই। যেকারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর বিসিকের কোটালিপাড়া, পূর্বাণী, সাব্বির, ন্যাশনাল ও জনতাসহ অনন্ত ১৫টি মিল বাজারে আটা-ময়দা সরবরাহ করে। এরমধ্যে কয়েকটি মিল সরকারের ওএমএস’র আটা দেয়।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন, ওএমএস’র সাশ্রয় মূল্যের আটা ১৬ মে থেকে বিক্রি বন্ধ রয়েছে। নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। আশা করছি দ্রুতই সাশ্রয় মূল্যের আটা বিক্রি শুরু হবে।
বাজারে লাগামহীন দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আটা-ময়দার মজুত গড়া প্রায় অসম্ভব। কারণ ১৫ দিনেই পোকা লেগে যায়। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত আটা আছে। সরকারি নির্দেশনা পেলেই ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে সাশ্রয় মূল্যে।