কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: কোটচাঁদপুরে টোল আদায় নিয়ে জোড়া খুনের ঘটনায় পুলিশ গত এক মাসে ২ জনকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা এখনও পলাতক রয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) জগন্নাথ চন্দ্র বলছেন পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে নিহতদের পরিবার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও সুষ্ঠ বিচার দাবি জানিয়েছেন।
গত ১৪ এপ্রিল সকালে শহরের চৌগাছা বাসস্ট্যান্ডের ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে টোল আদায় নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে জীবন (১৯) ও আক্তারুল (২১) খুন হয়। পিতাহারা জীবনের মা মুক্তি শহরের আদর্শপাড়াস্থ পিতার বাড়িতে থেকে ঝিয়ের কাজ করে ছেলে জীবন ও প্রতিবন্ধী কন্যা ফিরোজা (২২) কে লালন-পালন করেন। ঘটনার দিন সকালে সাড়ে ১০টার দিকে সন্ত্রাসীরা জীবনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। জীবন পেশায় ছিল একজন নির্মাণ শ্রমিক। তার মা জানান, ১ বৈশাখ বলে জীবন ওই দিন কাজে যায়নি। তার ধারনা কারো প্ররোচনায় সে চৌগাছা ষ্ট্যান্ডে যায়। মুক্তি খাতুনের অভিযোগ পরদিন ১৫ এপ্রিল ছেলের লাশ দাফন শেষে থানায় মামলা করতে যান। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও পুলিশ মামলা নেয়নি। পুলিশ বলে একই ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা নেয়া যাবে না। মুক্তি খাতুনের ধারনা এ মামলায় যিনি বাদী হয়েছেন তিনি হয়ত এক সময় নিষ্পত্তি করবেন বলে আংশকা করছেন। এমন ধারনা থেকেই তিনি এ ঘটনায় ঝিনাইদহ বিজ্ঞ আমলী আদালতে নিজে বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। টোল আদায় নিয়ে অপর নিহত আক্তারুল (২১) স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়মিত লাইনম্যান। ওইদিন সকালে কাজে আসার জন্য উপজেলা এলাঙ্গী বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। এমন সময় একই গ্রামের আলী (৩৫) তাকে মোটরসাইকেলে তুলে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। এখানে পৌঁছানোর পর এজাহার নামীয় ১নং আসামী সোহাগ (৩০) তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে তাকে কোটচাঁদপুর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে অবস্থার অবনতিতে তাকে যশোরে পাঠানো হয়। যশোরে পৌঁছানোর আগেই পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরতরা বলছেন আক্তার প্রায় এক বছর যাবৎ বিদ্যুৎ লাইনের অনিয়মিত শ্রমিক হিসাবে কাজ করত। সে কখনও কোন রাজনীতি করতো না। কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথেও যুক্ত ছিল না। এ হত্যকান্ডের ঘটনায় আক্তারুলের পিতা ৮ জনের নাম উল্লেখসহ ৫-৬ কে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোহাগের পিতা দাউদ হোসেন ৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ এনে থানায় পৃথক মামলা করেন। এ মামলার সকল আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। ঘটনার দিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আব্বাস (৩৪) ও ইমন হোসেন ডন (২৮) কে আটক করে। এরপর আব্বাসকে হত্যা মামলায় ও ডনকে হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। গত ২৪ এপ্রিল পুলিশ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোহাগকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে। তবে গত ১ মাস পার হতে চললেও আর কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি।
এ ব্যাপারে হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) জগন্নাথ চন্দ্র বলছেন পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে। এদিকে নিহতদের পরিবার দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন।