খুলনা ব্যুরো :
বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে খুলনায় আসে সাতক্ষীরা জেলার উমারপাড়ার হামিদের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব। বন্ধুর প্রতারণার শিকার হয়ে তাকে ১৩ খন্ড হতে হয়। ২৬ জুলাই খুলনা জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। আগামী ১১ আগস্ট আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো।
এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৫ মার্চ দুপুরে ফোন পেয়ে সাতক্ষীরা থেকে খুলনায় আসে হাবিব। ৬ মার্চ তার বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিতে থাকেন। পরে হাবিবের শ্বশুর ৭ মার্চ সাতক্ষীরা সদর থানায় জিডি করেন। ৮ মার্চ দৈনিক দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে হাবিবের পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন খুলনায় অজ্ঞাত যুবকের ১৩ খন্ড লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই দিন তারা সোনাডাঙ্গা পুলিশের সহায়তায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে হাবিবের লাশ শনাক্ত করেন। এ ব্যাপারে নিহতের দুলাভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, যার নং ১৪।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরিফ মাহমুদ লিটন অভিযোগপত্রের বরাত দিয়ে জানান, ভিকটিম হাবিব ও আসামিরা জেলে ছিল। হাবিব জেল থেকে বের হওয়ার সময় এ কে এম মুজতবা চৌধুরী ওরফে মামুন ওরফে মোস্তফা মামুন তাকে জেল থেকে বের করার অনুরোধ করে। এ সময় মামুন স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে দেয় হাবিবকে। তাকে জেল থেকে বের করা দূরে থাক মামুনের স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সে। তাকে নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ঘুরতে থাকে। মামুনের বোনের সাথেও প্রেমের সম্পর্ক করে। পরে স্ত্রীর কাছ থেকে সবকিছু শুনে ক্ষুব্ধ হয় মামুন এবং জেলে থাকা অবস্থায়ই হাবিবকে হত্যার পরিকল্পনা করে মামুন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি আসাদ ফোন দেয় হাবিবকে। ফোন পেয়ে ৫ মার্চ দুপুর ৩ টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে খুলনায় আসে হাবিব। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হাবিবকে ফারাজীপাড়া এলাকার হাসানাত মঞ্জিলের চারতলা ভবনের নিচতলায় আসাদের বাড়িতে নেয়া হয়। হত্যার আগে হাবিবকে মিষ্টির ভেতর চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে খলিলুর রহমান খলিল। অনুপম মহলদার ও খলিল হাবিবের হাত ও পা চেপে ধরে। প্রথমে সরদার আসাদ ওরফে আরিফ ভিকটিম হাবিবের বুকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে। আব্দুল হালিম গাজী ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে। মামুন ওরফে মোস্তফা হাবিবের পুরুষাঙ্গ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। হত্যাকান্ডের পর লাশের টুকরোগুলো বাজারের ব্যাগে করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয় আসামিরা। পরে হাবিবের ডেবিড কার্ড ব্যবহার করে আসামিরা টাকা তুলে নেয়।
যেভাবে গ্রেপ্তার হয় আসামিরা : পুলিশের পাশাপাশি র্যাব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ১১ মার্চ কুয়েট এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাবিবুর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সরদার আসাদুজ্জামান (৩৫) কে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেয়া তথ্যে বটিয়াঘাটা থেকে অনুপম মহলদার (৪২) কে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সোনাডাঙ্গা থানাধীন ফারাজীপাড়া লেনের ৩৪, হাসনাত মঞ্জিলের নিচতলায় আসাদুজ্জামানের ভাড়া বাসায় অভিযান চালায় র্যাব-৬’র সদস্যরা। ওই কক্ষ থেকে নিহত হাবিবুরের মরদেহের বাকি অংশ, মোটরসাইকেল ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে। এরপর হত্যাকান্ডের সাথে জাড়িত সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার ৪ জন আসামি হত্যাকান্ডে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।