চাকরি দেবার নামে একশ্রেণির প্রতারক দেশটা যেন চষে বেড়াচ্ছে। একটা ফটকাবাজি ব্যবসা। এই ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের ন্যুনতম মানবিক মূল্যবোধ আছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। দেশের হাজার হাজার মানুষ তাদের সর্বস্ব শেষ করে এই ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। অনেকের মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও থাকছে না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে চাকরি প্রার্থীদের সেই সুখের স্বপ্ন আর পূরণ হচ্ছে না।
এমন হাজারো আশাহত মানুষের মধ্যে যশোর সদর উপজেলা কাশিমপুর গ্রামের বনি আদম একজন। দৈনিক কল্যাণে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বনি আদম সমাজসেবা বিভাগের চাকরির জন্য আরিফ হোসেন নামে এক প্রতারকের হাতে ১৯ লাখ টাকা তুলে দেন। ওই প্রতারকের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার সংগুসেন গ্রামে। এই প্রতারক বনি আদমকে মাগুরা সমাজসেবা অফিসে যোগদানের জন্য সমাজ সেবা অধিদফতরের একটি নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেয়। কিন্তু যোগদান করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন সেটি ভুয়া। পরে আরিফের কাছে টাকা ফেরৎ চাইলে সে সাফ জানিয়ে দিয়েছে টাকা ফেরৎ দেবে না। উপায় না পেয়ে আরিফের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গ্রাম-গঞ্জে এভাবে যারা মানুষের সাথে প্রতারণা করছে তারা কিন্তু কেউই সামাজিক সভ্য মানুষ নয়। তারা মানুষকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে তাদের সর্বনাশ করে চলেছে একে একে। এমন কোনো গ্রাম নেই যে সে গ্রামে এভাবে দু-দশজন প্রতারণার শিকার হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে কড়াকড়ি ব্যবস্থা আরোপ হচ্ছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা একদিন দেখা যাবে হতাশ মানুষের মিছিল লম্বা হতে হতে দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত হয়ে গেছে। যা জাতির জন্য বড়ই ক্ষতিকর হবে।
অভিযোগ শোনা যায়, এসব প্রতারকদের নাকি সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। যত ঝক্কি-ঝামেলা তারাই হুমকি দেখিয়ে এমন কি পেশিশক্তি প্রয়োগ করে মোকাবেলা করে। ফলে অনেকে তাদের সর্বস্ব শেষ করে প্রতারকদের হাতে তুলে দিয়ে পথের ফকির হলেও কিছুই করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এ সব দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই। মাদক, সন্ত্রাস প্রভৃতি শক্তহাতে দমন করে সরকার যে প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, এই প্রতারক দমনেও সেইরূপ কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। আমরা মনে করি এমন একটা পদক্ষেপ নিলে সাধারণ মানুষ অন্তত ঘরের টাকা পরের হাতে তুলে দিয়ে নিস্ব হবার হতে থেকে রেহাই পাবে। মানুষের সর্বস্বান্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতারকদের দমন সরকারের দায়িত্বও বটে।