চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: ছয় মাস হলো ছাত্রলীগের কমিটি নেই যশোরের চৌগাছা উপজেলায়। গত বছর ২০ নভেম্বর কোনো আহ্বায়ক কমিটি না করে উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্তির কারণে উপজেলা সংগঠনটি হয়ে পড়েছে এখন কান্ডারিহীন।
এতে স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রলীগের স্বাভাবিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এদিকে নানা আলোচনা-সমালোচনা কাটিয়ে এবার সামনে এসেছে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য অনেক নতুন মুখ।
জেলা ছাত্রলীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২টি পদের বিপরীতে জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে শতাধিক। সেই জীবনবৃত্তান্ত জমা হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ আলোর মুখ দেখেনি চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি। নেতৃত্ববিহীন ছাত্রলীগ থাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি ও স্বাভাবিক প্রাণ চাঞ্চল্যহীন পড়েছে সংগঠনটি।
যশোর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল ২০১৫ সালের ১৬ জুন চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। সেই ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি ইব্রাহিম হুসাইন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন শফিকুজ্জামান রাজু। কমিটির মেয়াদ দেয়া হয় ১ বছর। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি দায়িত্ব পালন করেন ৬ বছর ৫ মাস।
পরবর্তীতে, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিন কবির পিয়াস ও সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশদ পল্লব দায়িত্বভার গ্রহণ করে মেয়াদ উত্তীর্ণ চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কোন আহ্বায়ক কমিটি ছাড়ায়। ওই সাথে বিলুপ্ত ঘোষণাপত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়। জেলা ছাত্রলীগের নির্দেশক্রমে জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে প্রায় শতাধিক।
দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস কারো নেতৃত্ব ছাড়াই চলছে উপজেলা ছাত্রলীগ। বলতে গেলে গতবছর ২০নভেম্বর কমিটি বিলুপ্তির পর থেকে অভিভাবকহীন হয়ে আছে বৃহত্তম এ ছাত্র সংগঠনটি। ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এমনকি কমিটি না থাকায় বিগত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেনি ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী। তাছাড়া কার্যক্রম না থাকায় প্রকৃত ও ত্যাগী ছাত্রনেতাদেরও বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
কমিটির বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। তবে কমিটির বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের নেতারা নিশ্চয় বিচক্ষণ। তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি এমন কাউকে দেয়া হোক যে নিয়মিত ছাত্র ও মাদকের সাথে জড়িত না। কোন অযোগ্যরা কোনভাবেই চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে নেতৃত্ব পাক সেটি আমাদের কাম্য নয়।
সদ্য বিদায়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদেকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চৌগাছা উপজেলা শাখার সহসভাপতি থাকাকালীন সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। জেলা কমিটির লিখিত প্যাডে আমাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার পরে অনেক পদ প্রত্যাশীদের আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি। আমি বলতে চাই, চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেখে শুনে যাচাই করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি এবং আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য, নেশামুক্ত চাঁদাবাজ মুক্ত নিয়মিত ছাত্র নেতৃত্ব আসুক।
সদ্যবিদায়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, কোনো জামায়াত-বিএনপি পরিবারের ছেলে কমিটিতে না আসে। এছাড়া যেনো পকেট কমিটি না করা হয় ও সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেয়ার জন্য জেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব বলেন, চৌগাছা উপজেলার ছাত্রলীগের কমিটির বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া জেলায় দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় জমে রয়েছে বহু কাজ। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ছাড়াও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে জেলা ছাত্রলীগ ব্যস্ত সময় পার করছে। তারপরও চৌগাছা উপজেলা থেকে প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। যাদের বয়স নেই, যারা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট, যারা অতীতে সাংগঠনিক কার্যক্রমে ছিল না তাদেরকে চিহ্নিত করতে একটু সময় লাগছে। তারপরও এসব কাজ শেষ পর্যায়ে।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিরোধীতাকারী কেউ ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে থাকবে না।’ তবে যেকোন সময়ে চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।