চারু আদিত্য
পাতার ফাঁক গলে নামছে নরম রোদের আভা। সূর্য কণায় ঝিকমিক করছে ক্যানভাসের রঙরেখা। পেন্সিল ও রঙমাখানো তুলির আঁচড়ে আর্ট পেপার হয়ে উঠছে একাত্তরের রণাঙ্গন। কালার প্লেটে বারবার ডুব দিচ্ছে পেইন্ট ব্রাশ। আর তারই মসৃন ছোঁয়ায় সাদা কাগজ জুড়ে চলছে ছবির নান্দনিক কারুকাজ। এমন দৃশ্য যশোর পৌর উদ্যানে আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। শনিবার মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
এদিন প্রতিযোগিতার সময় নির্ধারিত ছিল বেলা এগারটা। তারও বেশ আগেই পেন্সিল বক্স, রঙতুলি, ড্রয়িং বোর্ডসহ ছবি আঁকার অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয় শিশুরা। তাদের সঙ্গে আসেন অভিভাবকরাও। উদ্যানের সবুজ চত্বরে আগে থেকেই পাটি ও কার্পেট পেতে রাখা হয়। সেখানে বসে কচিকাঁচারা গভীর মনোযোগে ছবি আঁকায় ডুব দেয়।
আয়োজক কর্তৃপক্ষ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার আর্ট পেপার সরবরাহ করে। সঙ্গে আনা ছবি আঁকার উপকরণ নিয়ে শিশুরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। দেখা যায়, কাঠ পেন্সিল দিয়ে কেউ কেউ প্রথমে ছবির অবয়ব এঁকে নিচ্ছে। এরপর তাতে বিচিত্র সব রঙের মিশেল দিচ্ছে। জল ও মোম রঙের ছোঁয়া পেয়ে ছবিগুলো অনবদ্য রূপ নেয়।
তর্জনী উঁচিয়ে সাত মার্চের ভাষণরত বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকে কেউ কেউ। আবার কারোর ছবিতে ছিল মহান স্বাধীনতার স্বারক স্থাপনা স্মৃতিসৌধ। রাইফেল-বেয়নেট কাঁধে ঝোলানো মুক্তিযোদ্ধারাও কারোর ছবির বিষয়বস্তু ছিলো। আবার কেউ আঁকছিলো পাকবাহিনীর অগ্নিসংযোগ, নারীদের সম্ভ্রম হানি ও হত্যযজ্ঞের বিভীষিকার দৃশ্যচিত্র।
যশোর ক্যান্টনমেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিমা জামান বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি আঁকছিলো। জলরঙের ছোঁয়ায় সেই ছবি জীবন্ত হয়ে ওঠে যেন। সূর্য রশ্মির ছটায় ছবিটি হয়ে দীপ্তিময়। আলাপচাতিায় এই প্রতিযোগীর মা রহিমা খানম জানান, বিভিন্ন দিবস কেন্দ্র করে এই শিশুদের এই ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন দরকার। এতে শিশুরা সৃজনশীলতার চর্চায় আকৃষ্ট হয়। এছাড়া উদ্যানের নিবিঢ় এই পরিবেশে তারা প্রকৃতির সাথে একাকার হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
আরেক প্রতিযোগী জাওয়াদ আফনানের বাবা আলমগীর হোসেন জানান, শিশুদের সৃজনশীলতার বিকাশের জন্য এরকম আয়োজন দরকার। এই ধরণের প্রতিযোগিতা তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করবে।
এদিনের এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় যশোর শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক শিশু অংশ নেয়। এতে বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন চারুতীর্থের সাধারণ সম্পাদক সজল ব্যানার্জী ও চিত্রশিল্পী ওবায়েদ জাকির রাশু। এর আগে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার লেখা জমা নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার।