ক্রীড়া ডেস্ক : বুধবার রাতে বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে সবাই নাচে-গানে শিরোপা উদযাপন করেছেন। সেই শিরোপা উদযাপনে সতীর্থদের মধ্যমণি ছিলেন শাহেদা আক্তার রিপা। আজকের দিনটিও তার কাছে একটু ভিন্ন। সকাল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ পাচ্ছেন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় হওয়া রিপা।
কক্সবাজারের এই মেয়ের জীবনের গল্প অনেক কাঠখড় পোড়ানোর। বাবা-মা, তিন বোন ও এক ভাই নিয়ে তার পরিবার। এই বড় পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন রিপার বাবা জালাল আহমেদ। দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। দিন মজুরের কাজ করেও সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
সাধ থাকলেও সাধ্যের ঘাটতি ছিল। সেই দিনগুলো রিপা ভুলে যাননি, ‘আমি ও আমার ভাই বোন কখনো গাইড বই কিনতে পারিনি। প্রাইভেটও পড়তে পারিনি। এভাবেই আমরা পড়াশোনা করেছি।’
রিপার বাবা জালাল আহমেদ এখন শারীরিক অসুস্থতায় কাজ করতে পারেন না। সংসারের দায়িত্বটা তিন ভাই বোন মিলেই নিয়েছেন। ভাই সবার বড়। কক্সবাজারে এক ডিগ্রি কলেজে পড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো একটা চাকরি করেন। রিপার বড় এক বোন সেও পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করেন। রিপা বোনদের মধ্যে মেজ।
রিপা ছোট হলেও ফুটবলের সুবাদে বড় ভাই-বোনের চেয়ে পরিবারকে বেশি আর্থিক সহায়তা করতে পারেন, ‘আমি যেহেতু খেলাধুলা করি তাই আমি ওদের চেয়ে একটু বেশি সহায়তা করতে পারি। আমরা ভাই বোনরা চাইতাম বাবার যেন আর কষ্ট না করতে হয়। সেই কষ্ট লাঘব হওয়ায় এখন আমি তৃপ্ত।’
রিপাদের বাড়ি ছিল আগে মাটির ঘরের। মাসখানেক আগে রিপার অর্থে ও ভাই-বোনদের সাহায্যে বাড়িটি পাকা হয়েছে।
দারিদ্র্যের কষাঘাতে রিপা শৈশব জীবনে যখনই সময় পেয়েছেন তখনই ব্যাট-বল নিয়ে ছুটেছেন, ‘স্কুলে যেতাম। অনেক দিন বাবার সঙ্গে কাজও করেছি মাঠে। এর ফাঁকে যখনই ছুটি পেতাম তখনই খেলাধুলা করতাম।’
খেলাধুলায় পরিবার থেকে কখনো বাধা পাননি এই ফুটবলার, ‘বাবা-মা খেলার প্রতি ভালোই উৎসাহ দিয়েছেন। তাদের বাধা পেলে এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না।’
রিপার ফুটবলে আসার গল্পটাও দারুণ, ‘আমি ক্রিকেটেও অনেক ভালো খেলি। বিকেএসপিতে ভর্তির সময় আমার ফুফাতো ভাই বলেছিল ফুটবলে ট্রায়াল দিতে। ফুটবলে ট্রায়ালে টিকে যাওয়ার পর থেকেই ফুটবল আমার ধ্যানজ্ঞান। না হলে ক্রিকেটারও হতে পারতাম।’
বিকেএসপিতে তিনি এখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন। ফুটবলের মাধ্যমে তিনি দেশকে আরও অনেক কিছু দিতে চান, ‘জাতীয় ফুটবলের সাফল্যেও আমি ভূমিকা রাখতে চাই। ’
বাংলাদেশের ফুটবলে সাফল্য খরা। নারী ফুটবলাররা সাফল্য এনে দিচ্ছেন মাঝেমধ্যে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চ্যাম্পিয়নশিপ এনে দেওয়ার অন্যতম কারিগর রিপার তেমন উচ্চাশা নেই, ‘ফেডারেশন, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে যা দেয় আমি সেটা পেলেই খুশি।’
রিপার মতো দলের অন্য সবারও উঠে আসার গল্পটা প্রায় একই রকম। পরিবার, সমাজসহ আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তারা দেশকে এনে দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।