একবার এক মুরুব্বী তার গ্রামের কয়েকজন যুবক ছেলেকে নিয়ে কলকাতা বেড়াতে যাচ্ছেন। যুবক ছেলেরা এই প্রথম কলকাতা যাচ্ছে। তাদের টাকা পয়সা মুরুব্বীর কাছে দিয়ে দিল এবং অল্প কিছু টাকা পকেটে রেখে দিল। শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে যুবকদের কারো পকেটে টাকা নেই। মুরুব্বীকে এই ঘটনা জানালে তিনি বুক ফুঁলিয়ে বললেন, টাকা পকেটে রাখলে কি আর থাকে। এই দেখ, টাকা কোথায় রাখতে হয়, বলেই ধুতির খুট খুললেন, দেখলেন অনেক আগেই খুট কেটে টাকা নিয়ে গেছে।
সফিয়ার রহমান: ২০০৩ সালের কথা। কলকাতার বাংলা আকাদেমীতে দুই বাংলা মিলে শিমুল পলাশ কবিতা উৎসব হবে। দাওয়াত পেয়েছি, ২১ মে যাব। জীবনে প্রথম কলকাতায় যাব, এই নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। বন্ধুর স্ত্রী বিলকিস বেগমের পূর্বপুরুষ ইন্ডিয়ান। সে ভারত সম্পর্কে বেশ জানে। হেসে বলল, কলকাতা পকেটমারের জন্য বিখ্যাত, টাকা পয়সা সাবধানে রাখবেন, পকেট মার হতে পারে। সাথে একটা গল্পও জুড়ে দিল। একবার একলোক কলকাতা বেড়াতে গিয়েছিল। তার কলকাতার বন্ধুর কাছে শুনলো, ধর্মতলায় পকেটে টাকা নিয়ে কেউ পকেটমারের হাত থেকে রক্ষা পায় না। বন্ধু বাজি ধরে পকেটে একটা অচল টাকা নিয়ে সারাদিন ধর্মতলায় ঘুরে বেড়ালো। দিন শেষে বন্ধুকে বলল, দেখ আমার পকেট থেকে কেউ টাকাটা উঠিয়ে নিতে পারেনি। পাশে বসে এক পকেটমার বন্ধুদের এই আলাপ শুনছিল, এবার পকেটমার এগিয়ে এসে বলল, দাদা এখানে প্রতিটা পকেটমার আপনার টাকা কম করে হলেও তিন বার তুলে নিয়ে অচল বলে রেখে দিয়েছে।
বন্ধুবর অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা মুকুল ভাই খুবই ভারত ভক্ত। বাপ দাদার চৌদ্দ পুরুষের বাস সেখানে ছিল। সেই সুবাদে মাঝে মধ্যে ভারতে যায়। কলকাতায় যাচ্ছি শুনে মহাখুশি হলেন। কলকাতা সম্পর্কে কিছু উপদেশ দিলেন। আবার সর্তক করেও দিলেন। বললেন, যদি ট্রেনে বনগাঁ থেকে কলকাতা যান তবে মালপত্র এবং টাকা পয়সা সাবধানে রাখবেন। পকেট মারের দৌরাত্ম্য খুব বেশি। বিদেশে মহাবিপদে পড়ে যাবেন। মুকুল ভাইও পকেটমারদের নিয়ে একটা গল্প করলেন। একবার এক মুরুব্বী তার গ্রামের কয়েকজন যুবক ছেলেকে নিয়ে কলকাতা বেড়াতে যাচ্ছেন। যুবক ছেলেরা এই প্রথম কলকাতা যাচ্ছে। তাদের টাকা পয়সা মুরুব্বীর কাছে দিয়ে দিল এবং অল্প কিছু টাকা পকেটে রেখে দিল। শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে যুবকদের কারো পকেটে টাকা নেই। মুরুব্বীকে এই ঘটনা জানালে তিনি বুক ফুঁলিয়ে বললেন, টাকা পকেটে রাখলে কি আর থাকে। এই দেখ, টাকা কোথায় রাখতে হয়, বলেই ধুতির খুট খুললেন, দেখলেন অনেক আগেই খুট কেটে টাকা নিয়ে গেছে। পরপর দুটো গল্প শুনে ভারত সফরে একটু ভিতু হয়ে গেলাম। আমার টাকাগুলো কিভাবে রাখা যায় তা নিয়েও চিন্তা ভাবনা করছি। ভারতবর্ষ ছাড়া আর কোথায় কি পকেটমার আছে? একবার পত্রিকায় পড়েছিলাম- লন্ডনে বুড়ো-বুড়িরা পকেটে টাকা নিয়ে গীর্জায় উপাসনা করতে গেলেও পকেটে টাকা থাকে না। একি অলৌকিক ব্যাপার। শেষে জানা গেল কিছু বাংলাদেশি ওই দেশে এই কাজ করে। আমার মেধার অনেক অংশ ব্যয় হয় বাজারে গিয়ে সতর্কতা, অর্থ সংরক্ষণ এবং মাল কিনে যেন না ঠকে যায় তাই দরাদরির পেছনে। পকেটমারদের ইতিহাস এদেশে অনেক পুরানো, যা লিখে শেষ করা যাবে না। তবে পকেটমারেরা দয়ালুও হয়। একবার মদনপুর গ্রামের মহাতাব চাচা শ্রাবণের অভাব সহ্য করতে না পেরে শেষ সম্বল শীর্ণকায় গাভীটি বিক্রি করতে নিয়ে গেল ঝিকরগাছা বাজারে। গরু বিক্রি করে টাকা পকেটে রাখতেই পকেটমার হয়ে গেল। শোকে দুঃখে গরুহাটের মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে আর্তনাদ করতে থাকলো। অনেক লোক জড়ো হয়ে এদৃশ্য অবলোকন করছে। কেউ হাসছে, কেউ চোখের পানি মুচছে। পকেটমারদের দয়া হলো মহাতাবকে পাঁজাকোলা করে কপোতাক্ষ নদের ধারে নিয়ে গেল। স্বান্তনা দিয়ে পান খাওয়ায়ে গায়ে হাত বুলিয়ে টাকা ফিরিয়ে দিল।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সম্মিলনী ডিগ্রি কলেজ, মদনপুর, মণিরামপুর, যশোর।