নিরঞ্জন চক্রবর্তী, নেংগুড়াহাট :
চরম দুর্দিনে যাত্রাশিল্প। যাত্রাপালা মঞ্চস্থ না হওয়ায় শুধু গল্প করেই দিন পার করছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের যাত্রা শিল্পীরা। রাজগঞ্জ বাজারের গুড় হাটা গলির নিজাম চাচার চায়ের দোকানে রাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু নাট্য সংস্থার যাত্রাশিল্পী রুহুল কুদ্দুস, জসিম উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, নিজাম উদ্দিন, সোরাব হোসেন, শাহাদুজ্জামান, বিজয় মল্লিক, কামাল হোসেনসহ প্রায় ১৫ জন সকাল, দুপুর, রাত পর্যন্ত চা-পান করে সময় পার করেন। তবে এসময় তারা যাত্রা জগতের বিভিন্ন সংলাপ, কোথায় কোন অভিনয় করা হয়েছে আর কোন চরিত্রে কে অভিনয় করেছে, এই নিয়ে আলোচনা করেন। তারা মাঝে মাঝে যাত্রার সেই ঐতিহাসিক অভিনয়ের সংলাপ দেন। রাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু নাট্য সংস্থার সদস্য রুহুল কুদ্দুস তো যাত্রার গল্প না করে থাকতেই পারেন না। নিজামের চায়ের দোকান মানেই রাজগঞ্জ এলাকার যাত্রা শিল্পীদের আড্ডা। সরকারি কোনো দিবস আসলেই আগে থেকে প্রস্তুতি নেন যাত্রা অনুষ্ঠান করার জন্য। কিন্তু শেষে এশেই শেষ হয়ে যাই, তাদের সকল প্রস্তুতি। টাকা ম্যানেজ হয় না। তা না হলে অনুমতি মেলে না। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রস্তুতি। কিন্তু থেমে থাকে না এই চায়ের দোকানে বসে থাকা যাত্রা শিল্পীদের গল্প।
কপোতাক্ষ নদের অববাহিকা, অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা ঝাঁপা বাঁওড় পাড়ে গড়ে ওঠা জনপদ রাজগঞ্জ। এক সময় এই রাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত হতো বাঙ্গালীর ঐতিহ্য যাত্রাপালা। রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে টিন দিয়ে প্যান্ডেল করে মাসের পর মাস চলতো যাত্রাপালা। বৈকালি, বাবুল, নিউ রাজদুধ নামের অপেরাগুলোর শিল্পীরা এই রাজগঞ্জ স্কুলের মাঠে যাত্রা পরিবেশন করতেন। যাত্রা প্যান্ডেল-ভর্তি দর্শক। এই যাত্রা দেখতে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে গাড়িতে লোক আসতো। যাত্রা মাঠ হোটেল, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে ভরা থাকতো। সেসময় যখন যাত্রা চলতো, তখন উৎসব চলতো রাজগঞ্জে। কি জমজমাট থাকতো রাজগঞ্জ বাজার। কিন্তু এখন আর হয় না যাত্রা। যাত্রার সেই জৌলুস আর নেই। এখন সেই শিল্পীদের আর কদরও নেই। আধুনিকতায় হারিয়ে গেছে যাত্রাপালা। বর্তমান প্রজন্ম যাত্রা কি তা বোঝেই না।
রাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু নাট্য সংস্থার অন্যতম সংগঠক জসিম উদ্দিন জানান, অনেক নাম করা যাত্রাশিল্পী মারা গেছেন। আর যারা বেঁচে আছেন, তারা বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন। তারা চরম অর্থ কষ্টে ও অসুস্থ হয়ে নানা সমস্যায় রয়েছেন। যারা মানুষকে আনন্দ দিতেন, সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেন শিল্পের মাধ্যমে, তাদের জীবনই আজ দুর্দশাগ্রস্থ। রাজগঞ্জে যাত্রা শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে মাত্র কয়েকজন। এরা এখনো চেষ্টা করে যাত্রাপালা করার জন্য। কিন্তু নানান জটিলতার কারণে পারে না। জসিম উদ্দিন বলেন, যাত্রা শিল্পীরা যাত্রাপালার মাধ্যমে রহিম-রুপবান, আপন-দুলাল, আলোমতির প্রেম কুমার, কাশেম মালার প্রেম, ঝন্টু ডাকাত, বৌমা তোমার পায়ে নমস্কারসহ বিভিন্ন বাংলা ছবিগুলোর আদি ইতিহাস তুলে ধরতেন।