মেহেরপুর সদর উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেনের ৩০০ কলা গাছ কেটে দিয়ে তাকে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর তার কলা গাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছেন। এর আগে আরো একবার তার ১২২ টি কলাগাছ কেটে দেয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের এমন ক্ষতির কথা গণমাধ্যমে প্রায় খবর আকারে প্রকাশ হয়। যশোরের চৌগাছায় এর আগে এক রাতে দুর্বৃত্তরা হোগলাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নূর ইসলামের শিম গাছ কেটে দেয়। তিনি এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছিলেন। এই গাছে যখন শিম ধরা শুরু করে ঠিক তখন দুর্বৃত্তরা অর্ধেক জমির শিম গাছ কেটে দেয়। দুর্বৃত্তরা এর মাস ছয়েক আগে এই কৃষকের ২ বিঘা জমির পেপে গাছ কেটে দিয়েছিল। কিছুদিন আগে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে নষ্ট করে শার্শার এক কৃষকের ফসল। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে দুর্বৃত্তরা ঝিনাইদহ জেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের টিপু সুলতানের এক বিঘা জমির কলা গাছ কেটে দিয়েছে। ঝিনাইদহের মহেশপুরের এক কৃষকও একই ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ওই উপজেলার মান্দারবাড়িয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ৪০০ পেয়ারা গাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি এক বিঘা ১২ কাঠা জমিতে ৫০০ পেয়ারা গাছ রোপণ করেছিলেন। কিছু দিন আগে কালীগঞ্জে এক কৃষকের ধান ক্ষেতে ঘাষমারা ওষুষ দিয়ে তার ফসল জ্বালিয়ে দেয়া হয়। একই এলাকার এক কৃষকের কলাগাছ কেটে সাবাড় করে দুর্বৃত্তরা। যশোরের ঝিকরগাছায় এমন ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তরা আবার পুকুর বা ঘেরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলছে। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে এক কৃষকের ক্ষেতের বিভিন্ন প্রকার প্রায় ২ হাজার গাছ কেটে দিয়েছে।এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।
অমানুষ না হলে কেউ মানুষের মুখের গ্রাস এভাবে নষ্ট করতে পারে না। গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের ঘায়েল করার এক মোক্ষম কৌশল বের করেছে দুর্বৃত্তরা। কোনো কৃষকের সাথে যদি কারো দ্বন্দ্ব কলহ হয় তাহলে প্রকাশ্যে কৃষকের বিরুদ্ধে কিছু না করে তার ফসল নষ্ট করে দিয়ে তাকে সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে। এমন ধরনের ঘটনা সন্ত্রাসীরা প্রায়শ ঘটাচ্ছে।
ফসল নষ্ট করে কৃষককে ক্ষতি করার দুর্বৃত্তদের এ কৌশল সব জায়গায় শুরু হয়েছে। বিষয়টাকে হয়তোবা পুলিশ গ্রাম্য চাষাভুষা মানুষের ঘটনা বলে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু বিষয়টা কোনোক্রমেই অবহেলা করার মতো নয়। কারণ বিষয়টি উৎপাদনের। যার সাথে মানুষের বেঁচে থাকার সম্পর্ক জড়িত। কৃষক তার শরীরের রক্ত পানি করে ফসল ফলান। সেই ফসল দেশের মানুষের ক্ষুধার অন্ন হয়। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলেই সম্ভবত দুর্বৃত্তরা একই অপরাধ বার বার ঘটাতে আষ্কারা পাচ্ছে।
ফসল যারা ক্ষতি করতে পারে তারা পারে না এমন কোনো অপরাধ নেই তাদের কাছে। এদের দমনে শৈথিল্য প্রদর্শন জাতির ক্ষতিকে তরান্বিত করার শামিল। ফসল নষ্ট করার কয়েকটি ঘটনা থেকে যা জানা গেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বেশুমার ক্ষতির যে বর্ণনা আমরা পেয়েছি তাতে ওই কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। ফসল ক্ষতিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এক দিন দেখা যাবে কৃষকরা উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে, যা জাতির জন্য শুভ খবর নয়। এমন একটি অবস্থা হবার আগেই ফসল হন্তারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।