আব্দুল্লাহ সোহান,মণিরামপুর: ‘ক্ষেতের ফসল বেচতি (বিক্রি করতে) আর মুল্লুক (অনেক ঘুরে) হাটে নিতি হবে না। ক্ষেত থেকেই ফসল তুলেই সোজা হাটে নিতি পারবানে। ঘরের বারান্দা থেকে মোটরসাইকেল নামিয়ে কাজ সেরে ফের বারন্দায় উঠে পড়বো।’ কথাগুলো বলছিলেন কেশবপুর সীমন্তবর্তী মণিরামপুর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের সুশান্ত দাস ও নারায়ন হোড়।
সেতু নির্মাণে কয়েক গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে বছরের পর বছর ভোগান্তিতে থাকা গ্রামবাসির আশা। ক্ষেতের ফসল বিক্রি করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। মালামাল মাথায় করে ঝুকি নিয়ে সাকো হতে হবে না। সাকোর উপর দিয়ে চলার সময় পা পিছলে নদীতে পড়তে হবে না। স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ঝুকি নিয়ে সাকো পার হতে হবে না।
বছরের পর বছর হরিহর নদীর ওপর বাঁশের নির্মিত সাঁকো দিয়েই পারাপার করে আসছেন দূর্গাপুর গ্রামসহ কমপক্ষে ৫ গ্রামের মানুষ। বর্তমানে এ নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। কয়েক মাস পরেই জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
ওদের চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ। ভুক্তভোগি গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পূরণ হতে যাওয়ায় তাদের চোখে-মুখে প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। গ্রামের নারী-পুরুষ অনেকেই বলেন, ভোট আসলেই নেতারা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিতেন। কিন্তু এবার তাদের সেই দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত স্বপ্নের সেতু নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি। ইতোমধ্যে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য সেতু নির্মাণ কাজের অগ্রগতী সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগীয় অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় উপজেলার দূর্গাপুর-মুজগুন্নী সড়কে হরিহর নদীর উপর এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৬৮ লাখ ৭৩ হাজার ৮১ টাকা।
সরেজমিন গেলে দূর্গাপুর গ্রামের তপন দাস, আনিছুর, শিক্ষক দিলীপ পালসহ অনেকেই বলেন, সেতুর অভাবে বছরের পর বছর বাপ-দাদা, ঠাকুরদাসহ তাদের প্রজন্ম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সেতু নির্মাণ হলে শুধু এ উপজেলার দূর্গাপুর, মুজগুন্নী গ্রাম নয়, পার্শ্ববর্তী কেশবপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, গড়ভাঙ্গা, ইমাননগর গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে। সেতুবন্ধন তৈরি হবে ওই উপজেলার সাথে। গ্রামের যাদের মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ ছোট যানবাহন আছে, থাদের অধিকাংশই এসব যানবাহন নিয়ে বাড়িতে আসতে পারেন না। আসতে হলে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। ক্ষেতের ফসল হাটে নিতে হলে পরিবহন ব্যয় খরচ বেশি পড়ে। এতে করে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখ হন।
উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস আগামী জুন মাসে কাজ শেষ হলে জনসাধারনের চলাচলে সেতু উন্মুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।