নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া,/খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া/উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাতৃর!… বল বীর-/ আমি চির-উন্নত শির!’ ‘বিদ্রোহী’ কবিতাসহ নানা কবিতায় এমন স্পর্ধিত উচ্চারণের জন্য কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জেলে যেতে হয়েছিল। তবুও তিনি দমে যাননি। এ কারণেই তাকে বলা হয় ‘বিদ্রোহী কবি’। আবার সেই নজরুলই গেয়েছিলেন ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন/ দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি’র মতো প্রেমের গান। একদিকে যেমন তিনি ছিলেন শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার, দ্রোহের আগুনের হলকা ছুটিয়েছেন কলমের মোচড়ে, আবার অন্যদিকে ছিলেন বর্ষার দিনে রাস্তায় শুয়ে থাকা লাল শিমুলের মতো স্নিগ্ধতায় মোড়ানো।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহ-প্রতিবাদের নতুন ধারা সৃষ্টি করা এই ঝাঁকড়া চুলের কবি গেয়ে গেছেন সাম্য অসাম্প্রদায়িকতা আর মানবতার গান। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, ২৫ মে ধূমকেতুর সঙ্গে তুলনীয় এই মহান কবির ১২৩তম জন্মজয়ন্তী।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৯৯ সালের আজকের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেন কাজী নজরুল ইসলাম। কাজী ফকির আহমেদ ও জাহেরা খাতুন দম্পতির ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। মাত্র ৯ বছর বয়সেই পিতার ছায়া হারিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হন তিনি। জীবনের উত্তাল নদীতে হাল ধরেন শক্ত হাতে। ভর্তি হন লেটো গানের দলে। তার চাচা কাজী বজলে করিম ছিলেন চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো গানের ওস্তাদ। ধারণা করা হয়, চাচার প্রভাবেই তিনি লেটো গানের দলে যোগ দেন। সেখানে নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখতে গিয়ে কবির সাহিত্যচর্চার সূচনা হয়। এভাবেই বাংলার সাহিত্যাকাশে জন্ম নেয় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যার আলো এখনও পথ দেখায় বাঙালিকে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’
নজরুল জীবনে প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন, যা নজরুলসংগীত হিসেবে পরিচিত। মধ্যবয়সে তিনি পিকস্থ ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একসময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়। ওই বছর ২৯ আগস্ট তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন।