একশ আসনে হতে পারে পরিবর্তন
কল্যাণ ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের ধারা ধরে রাখতে নৌকার প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠ পর্যায়ে জরিপের কাজ করছে আওয়ামী লীগ। এই কাজ সরাসরি তদারকি করছেন শেখ হাসিনা নিজেই। নীতি নির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, এবার বিতর্কিত-জনবিচ্ছিন্ন-গ্রুপিংবাজ এমপিদের কপাল পুড়বে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে অন্তত একশ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। কাজেই ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নেত্রী ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থীদের চিহ্নিত করার কাজ এগিয়ে রাখছেন।
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা চলতি মাস থেকে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ত্যাগী ও আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকা নেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বাড়াতে যাচ্ছেন। তাই গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্যসহ তৃণমূলের নেতাদের সাথে ওয়ান টু ওয়ান সাক্ষাৎতের পরিসর বাড়তে যাচ্ছে।
এরইমধ্যে দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী নানামুখী অভিযোগ জমা হয়েছে। এ সব অভিযোগের মধ্যে দলের পক্ষ থেকে পৌরসভাসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, ‘এমপি বলয়’ ‘বিদ্রোহীদের পক্ষাবস্থান বা ইন্ধনে দলের অভ্যন্তরে কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ জমা পড়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক টিমের নেতারাও এসব বিষয়ে দলীয় সংসদ সদস্যদের বিষয়ে মৌখিকসহ প্রতিবেদন আকারে নানামুখী অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তৃণমূলের ওই সকল অভিযোগপত্র এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার টেবিলে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নেত্রী শেখ হাসিনা এই দলটিকে এত সময় ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যে দলটির সব তিনি চেনেন, ভালো বোঝেন। সে কারণেই তিনি দল হোক নির্বাচনে মনোনয়ন হোক, সময় উপযোগী করে সাজিয়ে থাকেন এবারো সেভাবেই সাজাবেন।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোয়নের ক্ষেত্রে কী গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে দিতে হবে। অবশ্যই তাকে সৎ নির্ভীক হতে হবে, এমন প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।
নানক বলেন, যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে তাদের ব্যাপারে সার্ভে চলছে। সবার আমলনামা নেত্রীর কাছে আছে। বারবার মাঠ জরিপ করে তিনি আমলনামা নিচ্ছেন। সেই আমালনামা অনুসারে কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেউ রেহাই পাবে না। সে যত বড় নেতাই হোক।
টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলে ও জেলা-উপজেলায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল উপদল গ্রুপিং এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। তৃণমূল জুড়ে কোথাও কোথাও ‘ভাই লীগ’, ‘এমপি লীগ’সহ নানামুখী বলয় ভিত্তিক রাজনীতির প্রতিযোগিতা বেড়েছে। আবার অনেকে নিজের গ্রুপ বা বলয় শক্তিশালী করার জন্য বিএনপি-জামায়াত পরিবার থেকে আসা বিতর্কিতদের নানাভাবে কাছে টেনেছেন। ফলে দলের অনেক ত্যাগী, পরিশ্রমী, পরীক্ষিত বা দুর্দিন –দুঃসময়ের নেতারা অভিমান করে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সভাপতি কোনো আলাদা প্রস্তুত শুরু করেছেন কি না জানতে চাইলে সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, আমাদের নেত্রী রাজনৈতিকভাবে দক্ষ এবং বিচক্ষণ। তিনি ৪২ বছর আওয়ামী লীগের হাল ধরে আছেন। আমাদের নেত্রী তো সব ধরনের নেতাকেই চেনেন, সব ধরনের প্রার্থীকেই তিনি চেনেন। মির্জা আজম এ সময় ইঙ্গিত দেন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে অন্তত একশ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।