ক্বদরের রাতে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম পবিত্র কোরআন নাজিল করেন। ক্বদরের রাতেই হজরত মুহম্মদ (স.) প্রথম ওহি লাভ করেন এবং রেসালাত অর্জন করেন। এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আমি ইহা (কোরআন) নাজিল করেছি ক্বদরের রাতে। (সুরাতুল কদর : ১)।
২৬ রামজান দিনগত রাত অর্থাৎ লাইলাতুল ক্বদরের রাত। পবিত্র শবে ক্বদর মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাতের নাম। এ রাতে গভীর আবেগে আপ্লুত হয় মুমিনের হৃদয়। বারোটি মাসের দীর্ঘ বিরতির পরে পাওয়া এ রজনীতে মহান আল্লাহর করুণা লাভের আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে সকল মুমিন মুসলমানের হৃদয়।
হজরত জিবরাঈল (আ.) নবী ও রাসুলদের কাছে ঐশী বাণী নিয়ে পৃথিবীতে আসতেন। রাসুলুল্লাহর (স.) ইন্তেকালের মাধ্যমে নবুয়ত ও রেসালাতের ধারা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হজরত জিবরাঈলের পৃথিবীতে আগমনও বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বছরে একবার মাত্র ক্বদরের রাতে আল্লাহর নির্দেশে রহমতের একদল ফেরেশতাকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। এরশাদ হয়েছে, এ রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ (জিবরাইল আ.) প্রত্যেক কাজের জন্য তাঁদের পালনকর্তার নির্দেশসহ অবতীর্ণ হন (সুরাতুল কদর : ৪)। শবে ক্বদরে সমগ্র সৃষ্টির আগামী এক বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। অর্থাৎ লওহে মাহফুজ থেকে তা নকল করে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয়। সুরাতুল কদরের ‘মিন কুল্লি আমরিন’ অংশের তাফসিরে কাতাদাহ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, এ রাতে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং মানুষের হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয় (ইবনে কাসির)। হজরত ইমাম শা’বী (র.) লিখেছেন, লাইলাতুল কদরে ফেরেশতারা মসজিদবাসী মুমিনদের জন্য শান্তির দোয়া করতে থাকেন। এরশাদ হয়েছে, রাতটি ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত কল্যাণময় (সুরাতুল কদর : ৫)।
লাইলাতুল ক্বদরের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে তুমি কি জানো? ক্বদরের রাত এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম (সুরাতুল ক্কদর : ২,৩)। লাইলাতুল ক্বদরের ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : এ মাসে এমন একটা রাত আছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় সে সত্যিকারের কপাল পোড়া (ইবনে কাসির)। অর্থাৎ একটি মাত্র রাত ‘লাইলাতুল ক্বদরের’ ইবাদতের সওয়াব একাধারে তিরাশি বছর ইবাদত করার চেয়েও বেশি।
শবে ক্বদর কোন রাত এ সম্পর্কে মতানৈক্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ মুহাক্কিকের মত হলো, মাহে রমজানের শেষ দশ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে শবে ক্বদর হতে পারে। আর এ মতটাই দালিলিকভাবে বিশুদ্ধ বলে মনে হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা রমজান মাসের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো ।
ক্বদরের রাতটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিন বান্দার জন্য বিশেষ এক উপহার। তাই ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সে সুযোটাকে কাজে লাগানোই মুমিনের কাজ। যে কোনো ইবাদতের মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা যেতে পারে।
হজরত আয়েশা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি একবার রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! শবে ক্বদর কোন রাত সেটা যদি আমি বুঝতে পারি তাহলে আমি তাতে কি দোয়া করব? তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
পরহেজগার মুসলমানরা আজ রাত ব্যাপী আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ ও পাপ মোচনের জন্য ইবাদত বন্দেগীতে কাটান। সকলের ইবাদত মহান আল্লাহ কবুল করুন, এ মোনাজাত আমাদেরও। আমিন।