কল্যাণ ডেস্ক : উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইনে চলল দেশের প্রথম মেট্রোরেল। ভায়াডাক্ট বা উড়ালপথের ওপরে পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে ট্রেনের পারফরম্যান্স পরীক্ষা করা হয়। তবে এ সময় টেকনিক্যাল লোকজন ছাড়া ট্রেনে কোনো যাত্রী বহন করা হয়নি।
পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনের জন্য মেট্রোরেল প্রস্তুত করা হচ্ছে। ট্রেনের সব পরীক্ষা শেষে আগামী বছরের ডিসেম্বরে নগরবাসীকে এর সুবিধা দিতে চায় সরকার।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার উত্তরা ডিপো থেকে মেট্রোরেল চালিয়ে আনা হয় আগারগাঁও স্টেশনে। এতে ৯টি স্টেশনের মধ্যে ট্রেনের পারফরম্যান্স পরীক্ষা করা হয়। স্টেশনগুলো হলো উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও।
মিরপুর ১০ পর্যন্ত ট্রেনের গতি ছিল ১০০ কিলোমিটার। তারপর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হয়েছে।
গত ২৯ আগস্ট মেট্রো ট্রেন সেটগুলো দেশে আসার পর ডিপোর মধ্যে ফাংশনাল এবং অন্যান্য কারিগরি পরীক্ষা শেষে ভায়াডাক্ট বা উড়ালপথের ওপরে পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখা হয়। এরপর গত ২৩ অক্টোবর প্রথম মেট্রো ট্রেনের পারফরম্যান্স পরীক্ষা শুরু হয়। শুরুতে উত্তরা থেকে তিনটি স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে মেট্রোরেল। গত মাসে দ্বিতীয় ধাপে তা সম্প্রসারণ করে মিরপুর-১০ পর্যন্ত ছয়টি স্টেশনে আসে। শেষ ধাপে আজ আগারগাঁও পর্যন্ত পারফরম্যান্স পরীক্ষা শুরু হলো।
জাপান থেকে আনা মেট্রোরেলের ট্রেনগুলোয় ডিসি ১ হাজার ৫০০ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোয় আছে লম্বালম্বি সিট। প্রতিটি ট্রেনেই রয়েছে দুটি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুই পাশে আছে চারটি করে দরজা। জাপানি মানের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংবলিত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে ১ হাজার ৭৩৮ জন। যাত্রীদের ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্ট কার্ড টিকিটের ব্যবস্থা।
এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে ৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। ছয়টি কোচ সংবলিত প্রতিটি একমুখী মেট্রো ট্রেন প্রতিবারে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। এতে অল্প সময়ে অধিক সংখ্যায় যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চালিত হওয়ায় কোন ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হবে না। ফলে বায়ু দূষণ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। উড়াল মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের উভয় পার্শ্বে শব্দ প্রতিবন্ধক দেয়াল আছে। ফলে মেট্রোরেলে শব্দ ও কম্পন দূষণের মাত্রা মানদণ্ড সীমার অনেক নিচে থাকবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। আর ২০২৩ সালে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হবে মেট্রোরেল।’
উল্লেখ্য, রাজধানীর মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্প নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের। ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুটটিকে লাইন-৬ বলা হয়। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৭২ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই অংশে কাজ হয়েছে ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।