পাখি নানাভাবে মানুষের উপকার করে। কিন্তু স্বার্থপর মানুষ তা না বুঝে নির্বিচারে এই নিরিহ প্রাণিকে হত্যা করে। মানুষ না জেনে ফসলের কীট দমনে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে। এর ফলে ওই বিষ দেয়া ক্ষেতে গিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি মরে সাবাড় হয়। এ কারণে অনেক প্রজাতির পাখি আজ আর চোখে পড়ে না। অথচ এই পাখিতেই কিন্তু ফেসলের কীট খেয়ে জীবন ধারণ করে পরোক্ষভাবে কীট-পতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করে। হাল আমলে কৃষি বিভাগ কৃষকদের এ কথা কিছুটা হলেও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। তারা কৃষকদের বুঝিয়েছে পাখির মাধ্যমে ফসলের কীট দমনের জন্য ক্ষেতে পাখির বসার উপযোগী ডাল-পালা পুতে দিতে হবে। এতে ওই ডাল-পালায় পাখি বসে ক্ষেতের পোকা খেয়ে ফেলে ফসলকে পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করবে। এ ব্যবস্থাকে পার্সিং পদ্ধতি বলা হয়।
কিছু দিন আগে পাখি রক্ষায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় এক নন্দিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেখানে গাছের ডালে ডালে পাখির বাসা তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। প্রকৃতিকে ভারসাম্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জ, সিঅ্যান্ডবিপাড়া, ছাগল খামার এলাকাসহ কয়েক স্থানে গাছের ডালে ডালে বাঁধা হয় মাটির ছোট ছোট কলস। এতে পাখিদের আনাগোনা বাড়ে। দেশি প্রজাতির পরিচিত পাখির পাশাপাশি দেখা মেলে রং-বেরঙের নানা প্রজাতির পাখির। বিশেষ করে শালিক, ঘুঘু ও বকের ঝাঁক দেখা যায় প্রায় সময়ই। সেই উদ্যোগটায় ভাটা পড়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
দীর্ঘদিন থেকেই নানা কারণে পাখিদের আবাস নষ্ট হচ্ছে। কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। এসব কারণেই মূলত পাখির সংখ্যা কমে আসছিল। কয়েক যুবকের প্রচেষ্টায় পাখির গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রাম। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় প্রায় তিন হাজার মাটির পাতিল গাছের ডালে বাঁধা হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার মাটির কলস বাঁধা হয়। পৌর পরিষদের প্রশংসনীয় উদ্যোগ সাধারণ মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করে। অনেকেই নিজ উদ্যোগে গাছের ডালে পাখির জন্য মাটির কলস বেঁধে দেয়। চুয়াডাঙ্গা পৌর পরিষদের উদ্যোগ প্রশংসনীয় ছিল। এর ফলে আমাদের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের সুরক্ষা হবার ক্ষেত্র তৈরি হয়। পাখিরা তাদের নিরাপদ আবাস পায়। যদি উদ্যোটিতে ভাটা পড়ে তাহলে তাদের উৎসাহিত করার ব্যবস্থা ডিনতে হবে। বিষয়টির প্রতি আমাদের নজর দেয়া দরকার। তবে এই সাথে এক শ্রেণির হৃদয়হীন শিকারী পাখি ধরে ব্যবসা করে। অনেক সৌখিন শিকারীর কবলে পড়েও পাখি নিশেষ হচ্ছে। এদেরকে সচেতন করতে হবে। যদি তারা প্রাকৃতিক ভরসাম্য রক্ষার ব্যাপারে উদাসিন হয় অথবা এ শুভ উদ্যোগের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখায় তাহলে আইনের আওতায় এনে তাদের দমনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় হতে হবে।