ছোলজার রহমান: নিজেদের অর্থায়নে নির্মীয়মান পদ্মা সেতু বাস্তব রুপ লাভ করে আগামী ২৫ জুন ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ঢাকা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমের যে অংশ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের সামান্য সুযোগ ও সীমিত আকারের কাঠামো ছিল এখন সে অংশ দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের নতুন মাত্রা ও গতিশীলতা ব্যাপক রুপ লাভ করতে চলেছে। এককভাবে কার বা কোন দলের সাফল্য ও কৃতিত্ব কত বেশি এবং কোন কোন ব্যক্তি, দল ও চক্র এটিকে নস্যাতের ষড়যন্ত্রে এগিয়ে ছিল- এ সংক্রান্ত আলোচনাকে বাদ রেখেই বলা যায় যে অনেক আগে থেকেই এর প্রয়োজন ছিল। সময় বাঁচানো, দুর্ভোগ ও ভোগান্তি হ্রাস, পরিবহন ও যোগাযোগে গতিশীলতা বৃদ্ধি, পর্যটন ও বিনোদন সুবিধা বৃদ্ধি, ২টি প্রশাসনিক বিভাগের যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ জোরদারকরণ, আঞ্চলিক সম্পদের ব্যবহার ও বাজার সুনিশ্চিৎকরণ,মোংলা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম ও গতিশীলতা বৃদ্ধি, ভারতের সাথে আমদানী-রপ্তানী বৃদ্ধি, ভারতে পর্যটন ও চিকিৎসা গ্রহণে গমণাগমন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা অভিগমন ও পুনর্বিন্যাস, প্রশাসনিক ও শিল্পস্থাপনে বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভাবনা, একমাত্র যোগাযোগ পথব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে সংযোগশীলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি যেমন বিকশিত হয়ে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে তেমনি অল্প ক’টি দিকে এটি উন্নয়নের বিপরীতেও ভূমিকা রাখবে। ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলের সাথে যেখানে যোগাযোগের কেবলমাত্র একটিই লাইনগ্রাফ ছিল এখন সেটি সার্কিট গ্রাফে পরিবর্তিত হয়ে সংযোগশীলতার সূচককে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। বহুবিধ বিকল্প পথে সংযোগ পথ বিকাশ উন্নত রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে। সার্বিক বিচারে যেহেতু পদ্মা সেতু সময় ও ব্যয় কমিয়ে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি হ্রাসে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে সেহেতু এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক পণ্যদ্রব্য উৎপাদন, শ্রম, ভূমি ব্যবহার বাজার নিশ্চিত ও সম্প্রসারণ এবং প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক সেবা প্রদানকে ত্বরান্বিত করবে। কোন এলাকার উৎপাদনে ঘাটতি ও উদ্বৃত্ততা এবং পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি ও উদ্বৃত্ততা সমন্বয় করে সম্পদের ব্যবহার ও সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে সংক্ষিপ্ত ও উন্নত পথ ব্যাপক ও যথাযথ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিধানের জরুরী মুহুর্তে দ্রুত সামরিক শক্তি প্রেরণ ও ব্যবস্থাপনায়ও যথাযথ যোগাযোগ অবকাঠামো যথোপযুক্ত সহায়তা দান করে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশের দুটি বিভাগের ২১টি জেলার নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলাসহ সমুদ্র উপকূলের সিংহভাগ, বনজ সম্পদের সবচেয়ে বড় এলাকা, সবচেয়ে বড় স্থল বন্দর, দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনে পদ্মা সেতু ব্যাপক ভূমিকা পালন করে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে এবং এভাবেই এগিয়ে যাবে আমার সোনার বাংলা।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ