রায়হান সিদ্দিক
জীবন্ত লাশের প্রতিচ্ছবি একজন মহিলাজনিত ফিস্টুলা রোগী। আত্বীয়-স্বজন সব কিছু থেকেও যার কেউ থাকে না কাছে। তেমনি একজন রোগী যশোরের খাজুরা বাজারের আলেয়া বেগম। ৪৪ বছর লড়েছেন ফিস্টুলার সাথে, কখনো জিততে পারেননি। স্কুলের পরিত্যক্ত ঘরে কিংবা নিজ ঘরে বন্ধি থাকতেন বেশিরভাগ সময়। হঠ্যাৎ একদিন পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসার কথা। জীবনে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। অশ্রুসিক্ত চোখে বর্ণনা করেন বিগত দিনে আদ্-দ্বীনের আন্তরিক সেবার সাথে চিকিৎসার স্মৃতিচারণ। আদ্-দ্বীনের কারণে আজ তার আনন্দময় জীবন।
গতকাল রবিবার আদ্ দ্বীন সকিনা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ যশোর আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যেগে মহিলাজনিত ফিস্টুলা রোগ নির্ণয় সেবা কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। আরো উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত ও সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহিন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, সারা জীবন বঙ্গবন্ধু নিপীড়িত, শোষিত জনগনের পক্ষে লড়েছেন। তার সেই আত্মত্যাগের আদর্শকে ধারণ করে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌছে যাবে। সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা সেবার সম্মিলিত চেষ্টায় শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শতভাগ হবে চিকিৎসা সেবা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহযোগিতায় ও আদ্-দ্বীন সকিনা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ যশোরের ব্যবস্থপনায় প্রতিটি ফিস্টুলা রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার অঙ্গিকার করা হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে।
একজন ফিস্টুলা রোগীর অনবরত প্রসাব ঝরতে থাকে। সে এক দুর্বিষহ জীবন। তারা পরিণত হন জীবন্ত লাশে। এমনটাই বলছিলেন ডা. শেখ নাজমুল হুদা।
মহিলাজনিত ফিস্টুলা কী?
মহিলা জনিত ফিস্টুলা হলো মাসিকের রাস্তার সাথে মূত্রথলি অথবা মলাশয়ের এক বা একাধিক অস্বাভাবিক ছিদ্র হয়ে যুক্ত হওয়া-যার ফলে মাসিকের রাস্তা দিয়ে সবসময় পায়খানা অথবা প্র¯্রাব অথবা উভয়ই ঝরে। ফলে ওই মহিলার প্র¯্রাবের বেগ হয় না। তার শরীর দিয়ে সব সময় প্রসাব ঝরতে থাকে। ফলে গায়ে দুর্গন্ধ হয় আর বিছানায় শুলে বিছানা ভিজে যায়।
মহিলাজনিত ফিস্টুলার কারণ
প্রসবজনিত ফিস্টুলা: দীর্ঘস্থায়ী বা বাধাগ্রস্থ প্রসবের ফলে হতে পারে। যখন প্রসব দীর্ঘস্থায়ী অর্থাৎ ১২ ঘণ্টার বেশি হলে মহিলাদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা হওয়ার ঝুঁকি বা আশংকা বেশি থাকে। প্রসবের সময় নবজাতকের মাথা মায়ের প্রসব রাস্তার নরম অঙ্গগুলোকে চাপ দিয়ে রাখে, নবজাতকের মাথার এই চাপের ফলে মায়ের নরম অঙ্গগুলোর রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্থ বা বন্ধ হয়ে যায়। যদি প্রসব দীর্ঘস্থায়ী হয় (১২ ঘণ্টার বেশি), তাহলে মায়ের সেই চাপে পড়া অঙ্গে পচন ধরে এবং খসে পড়ে, এর ফলে মাসিকের রাস্তার সাথে মূত্রথলি অথবা পায়খানার রাস্তা অথবা উভয়ের মধ্যে এক বা একাধিক ছিদ্র তৈরি হয় এবং অনবরত অথবা মাঝে মধ্যে প্রসাব অথবা পায়খানা অথবা উভয়ই ঝরতে থাকে। এই অবস্থাটিকেই প্রসবজনিত ফিস্টুলা বলে।
অপারেশনজনিত ফিস্টুলা : সিজার বা অপারেশনের মাধ্যমে শিশুর জন্ম, অন্য যেকোন কারণে তলপেট, যোনিপথ বা জরায়ুতে অপারেশনের সময় অসাবধানতাবশত ফিস্টুলা হতে পারে।
আঘাতজনিত বা অন্যান্য কারণেও ফিস্টুলা বা এই অনাকাক্সিক্ষত ছিদ্র হতে পারে।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি কর্মসূচির ও উদ্বোধন করা হয়। বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ ৬জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে মাসিক বৃত্তির চেক প্রদান করা হয়। চেক প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের পরিচালক ফজলুল হক।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, ইন্টার্ন ডা. সংগীতা বসু ও ইন্টার্ন ডা. ফাতেমাতুজজাহান।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৯ হাজার ৫০০ মহিলাজনিত ফিস্টুলা রোগী আছেন। অচিরেই বাংলাদেশে আর কোনো মহিলাজনিত ফিস্টুলা রোগী থাকবে না এই লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।