বালকে চ্যাম্পিয়ন মণিরামপুর, ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক: বল মাঠে গড়ানোর পাঁচ মিনিটও পূর্ণ হয়নি। নিজেদের বড় ডি-বক্সের সামনে যশোর সদর উপজেলার মিডফিল্ডার তামান্না আক্তার বল দখলের লড়াইয়ে মাটিতে পড়ে যান। এই সময় তারই এক সতীর্থ ডিফেন্ডার উল্টো হয়ে নিজের পজিশনে ফিরে যাচ্ছিলেন। ফেরার সময় বেখেয়ালে থাকা ওই ডিফেন্ডারের পা পড়ে তামান্নার হাঁটুতে। পায়ে বুটের আঘাতে তামান্না আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। মাঠে কোন স্ট্রেচার না থাকায় চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়া হয় মাঠের বাইরে।
অপরদিকে অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় ২০-২৫ মিনিট ডাগ আউটে ব্যাথায় কাতরাতে থাকেন তামান্না। তামান্নার ব্যাথায় দলের কোচ, ম্যানেজার, একাদশের বাইরে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের চোখে পানি চলে আসে। টাইব্রেকারে কেশবপুরকে ২-১ গোলে হারানোর পরও থামেনি খেলোয়াড়দের এই কান্না।
ওই সময় বরফ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার মতও উপকরণ ছিল না মাঠে। অপরদিকে মাঠে কোন অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় একইভাবে তোলা হয় স্টেডিয়াম গেটে থাকা ইজিবাইকে। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়া হয় তামান্নাকে। এই সব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা।
এই ঘটনার প্রভাব পড়ে মাঠে খেলোয়াড়দের উপর। সেমিফাইনালে ভালো খেলা দেখানো যশোর সদরের মেয়েরা তাদের স্বাভাবিক খেলা হারিয়ে ফেলেন। তারপরে আবার বিরতিতে এসে শোনে তামান্নার ডান পা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা। তবে এইসব কিছুতে ভেঙ্গে পড়েননি তারা। পরের অর্ধটুকু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়। পরে টাইব্রেকারে গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় ২-১ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন সদরের মেয়েরা। এই সময় সবার চোখ ছিল জলে ভরা। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।
এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের কোচ মুসলিমা আক্তার মলি। তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ডাগ-আউটে ২০-২৫ মিনিট বসেছিলাম। পরে ইজিবাইকে তোলার পর অ্যাম্বুলেন্স আসে।
মলি আরও বলেন, তামান্নার ডান হাঁটুর নিচের ভেঙ্গে গেছে। তামান্নার অপারেশন করা লাগবে। আজ রোববার ডাক্তাররা মেডিকেল বোর্ড বসাবে। এই বোর্ডের সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনালে যতটা উত্তেজনা, ফুটবল শৈলী আশা করা হয়েছিলো তেমনটি খুব বেশি চোখে পড়েনি। অনেকটা অপরিকল্পিত ফুটবল দেখা গেছে এদিন।
গোলের সহজ সুযোগ বেশি নষ্ট করেছেন সদরের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা। সাকিব ও মেহেদীরা যেভাবে গোল মিস করেছেন তা ছিলো অনেকাংশেই হাস্যকর। তবে কম সুযোগ পেয়ে যা করার দরকার সেটি করে দেখিয়েছেন মণিরামপুর উপজেলার খেলোয়াড়রা। ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে দু’টি গোল আসে মণিরামপুর উপজেলার খেলোয়াড়দের পা থেকে। ৫০ মিনিটে গোলের সূচনা করেন তানভীর আহমেদ দিপু। আর তারই সতীর্থ রাজু আহমেদ দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন। শেষদিকে সদরের খেলোয়াড়রা মণিরামপুরের খেলোয়াড়দের ওপর চাপ প্রয়োগ করলেও তাদের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে গোল আদায় করে নিতে পারেননি সদরের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন যশোর সদর উপজেলার হিরা খাতুন। কেশবপুরের রিয়া খাতুন চার গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। অপরদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সদরের সাকিব হাসান। একই দলের ফাহিম মুনতাসির রেদওয়ান পাঁচটি গোল করে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা।
শেষে স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপ পরিচালক হুসাইন শওকত বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা খালিদ জাহাঙ্গীর, প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এমএ আকসাদ সিদ্দিকী শৈবাল। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক এবিএম আখতারুজ্জামান।