ঢাকা অফিস :
জ্বালানি তেলে লোকসান কমাতে ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে প্রাথমিকভাবে এক ঘণ্টা লোডশেডিং, রাত ৮টার পর খোলা থাকলে দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অন্তত সপ্তাহে একদিন দেশের সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি সংকট কমাতে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি অফিস সময় কমানো ও সরকারি মিটিং ভার্চুয়ালি করার চিন্তাভাবনা চলছে। এছাড়া মসজিদে নামাজ শেষ হলে এসি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হলে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেবে। যে কারণে প্রাথমিকভাবে এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিদুৎ, জ্বালানি ও খনিজসস্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আমরা এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেব। এতে ঘাটতি না কমলে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হবে। সোমবার সচিবালয়ে বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (আজ) থেকে শুরু করব। প্রাথমিকভাবে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেব। পিক এবং অফপিক আওয়ারেও দেখব। এভাবে এক সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব। লোডশেডিং দেওয়ার আগে ওই এলাকায় মাইকিং করা হবে।’
বিদ্যুৎ, গ্যাস খাতের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দাবি করতে পারি সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে স্বল্পতা, মূল্য বৃদ্ধি প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে ইউরোপে তীব্রভাবে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ইউরোপের দেশগুলোও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেক দেশ রেশনিং শুরু করেছে। কিছু কিছু দেশ দাম সমন্বয় করেছে। এ পরিস্থিতে দেখা যাচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশে।’ তিনি বলেন, ‘একটা ক্রাইসিস মোমেন্ট যাচ্ছে। এটা চিন্তা করে আমরা সাশ্রয়ী হই। যানবাহন কম ব্যবহার করলে তেল আমদানি কমবে। রিজার্ভের ওপরে চাপ কিছুটা কম পরবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ভার্চুয়ালি বৈঠক করি তাতে যানবাহনে জ্বালানি সাশ্রয়ী হবে। কারণ আমরা যে পরিমাণ ডিজেল আমদানি করি তার ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। বাকিটা যানবাহনে। এই জায়গায় যদি সাশ্রয় করতে পারি তাহলে কিছুটা হলে আমদানিতে চাপ কমবে।’
রাত ৮টার পর দোকান-শপিংমল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
রাত ৮টার পর খোলা থাকলে দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, রাত ৮টা থেকে কোনোরকম দোকানপাট, শপিংমল, আলোকসজ্জা-সব বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে, তারা খুব কঠিনভাবে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কেউ অমান্য করেন তাদের বিদ্যুতের লাইন আমরা বিচ্ছিন্ন করে দেবো।
সপ্তাহে ১ দিন বন্ধ পেট্রোলপাম্প
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে অন্তত সপ্তাহে একদিন দেশের সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত সাময়িক। বিশ্ব পরিস্থিতির উত্তরণ হলে আগের অবস্থানে ফিরে আসা হবে।’ তিনি জানান, জ্বালানি তেলের লোকসান কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং তা সোমবার (১৮ জুলাই) থেকেই কার্যকর হচ্ছে।