বেশি দিনের কথা নয়, ঝনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলায় বিড়ির আগুনে ১০০ বিঘা জমির পান বরজ পুড়ে যায়। এতে ৬০ জন পানচাষির কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বিড়ি-সিগারেটের আগুনে এ ধরনের ক্ষতি নতুন নয়। কিন্তু যারা ধুমপান করে তাদের যেন এতে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। বিড়ি-সিগারেটের আগুনে যে শুধু সম্পদ ভষ্মিভূত হচ্ছে তা নয়। এর ধোঁয়ায় ৭ হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে নিকোটিন, কার্বন-মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন, সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া ও পোলানিয়ামসহ ২১০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উল্লেখযোগ্য। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল মারাত্মক তথ্য দিয়েছে। সেল পরিবেশিত তথ্যে বলা হয়েছ, ৭০টি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যার প্রভাবে ক্যানসার হতে পারে। তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, এই তামাকের কারণে বছরে মারা যাচ্ছে ৫৭ হাজার মানুষ। পঙ্গুত্ব বরণ করছে আরো ৪ লাখ।
দেখা যাচ্ছে তামাকের ক্ষতি করোনার চেয়ে কম নয়। দেশে আইন আছে, কিন্তু আইন মানার প্রবণতা নেই। প্রকাশ্যে ধুমপান বন্ধের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু হলে কি হবে। আইনের প্রয়োগ নেই। দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে আইন প্রণীত হয়। কিন্তু সেই আইনের যদি প্রয়োগ না হয় তা হলে আইন প্রণয়ন করে লাভটা হলো কি? আইন আছে জনবহুল স্থানে প্রকাশ্যে ধুমপান করা যাবে না। কিন্তু ধুমপায়ীরা তা মানছে না। দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক ৪ কোটি ১৩ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। এর মধ্যে নারী ধুমপায়ীও আছে। পুরুষ ধুমপায়ীদের সবাই প্রকাশ্যে ধুমপান করে। এ কারণে যারা ধুমপান করে না তারা পরোক্ষভাবে ধুমপানের ক্ষতিকর প্রভাবে পড়ে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ। এই মারাত্মক বিষয়টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যারা আইন মানছে না তারা বলছে, আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছায় বাধা দেয়ার তুমি কে?
জনবহুল স্থানে ধুমপানের ওপর এক তথ্য প্রকাশ করেছে এইড ফাউন্ডেশন ও তামাক বিরোধী জোট। তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ২৪ শতাংশ মানুষ গণপরিবহনে ধুমপান করে। এর মধ্যে গণপরিবহনের চালক-হেলপারের সংখ্যা বেশি। এছাড়া আদালত এলাকায় ৪ শতাংশ, বিপণীবিতানগুলোতে ১২ শতাংশ, শিশু পার্কগুলোতে ৮ দশমিক ৮শতাংশ, সিনেমা হলে ৮ শতাংশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮ শতাংশ, হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ৪ শতাংশ,স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ ধুমপান করে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ গণপরিবহনে ধূমপান বিরোধী সতর্কীকরণ সংকেত ব্যবহার করা হচ্ছে না। শিশু পার্কগুলোতে ৩ শতাংশ, সিনেমা হলে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ধূমপান বিরোধী সতর্কীকরণ সংকেত ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্র ২১ দশমিক ৬ শতাংশ।
ধুমপান যারা করে তাদের চেয়ে ধোঁয়ায় অন্যদের ক্ষতি করে বেশি। এই আইন ভাঙার কারণে যে কি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে তা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। কোনো জায়গায় আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। ছোট ছোট বালুকণা মিলেই কিন্তু বিশাল মরুভূমির সৃষ্টি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি মিলেই সৃষ্টি মহাসাগর।
ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত গেয়ে লাভ নেই। মোদ্দা কথা হচ্ছে জাতিকে বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া ও আগুন থেকে থেকে রক্ষা করতে হবে। যে সব কথা বলা হয়েছে তা দৃশ্যমান নয় বলে হয়তো কেউ মানতে চায় না। কিন্তু ১০০ বিঘা পান বরজ পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি তো দৃশ্যমান। যাদের বরজ পুড়েছে তারা টের পাচ্ছে কি সর্বনাশ তাদের হয়ে গেল। আমাদের কথা হলো ধুমপান আসলে কোনো ছোট বিষয় নয়। কারণ ছোট বিষয় হলে আইন প্রণয়ন হতো না। ছোট হোক বড় হোক জনস্বার্থে বিষয়টির দিকে নজর দেয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একান্ত জরুরী। আইন অমান্য করে আমরা কোনোক্রমেই নিজেদেরকে সভ্য জাতি দাবি করতে পারিনে। আমরা আশা করবো জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ হোক। আমরা আইন মান্যকারী সভ্য জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াই।