নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর শহরের দড়াটানার গরিবশাহ মোড়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরির অন্যতম উদ্যোক্তা যশোরের কৃতি সন্তান সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পদ্যোক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হাই ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখানেই মৃত্যু হয় তার। এ উপলক্ষে আজ মরহুমের পারিবারের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হাই ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ থেকে যশোর-৩ (সদর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৯০-এর দশকে তিনি জাসদ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় হন। গাজী আব্দুল হাই ১৯৯৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শাসনামলে যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
দানশীল ব্যক্তি হিসেবে গাজী আব্দুল হাই ছিলেন সুপরিচিত। যশোর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে নিজে অকাতরে অর্থ দান করেছেন। দারিদ্র্য পীড়িত ও অসুস্থ ব্যক্তির জন্য তিনি ছিলেন ভরসাস্থল। মুক্তিযুদ্ধকালীন ঝিকরগাছা আর্মি ক্যাম্প দখল করে তিনি সেখানে একটি হাসপাতাল চালু করেন। যেটি বর্তমানে ঝিকরগাছা সরকারি হাসপাতাল।
১৯৬৯-৭১ সালে তিনি যশোর জেলা ছাত্রলীগের পাঠচক্র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি সেই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যূত্থানে তিনি যশোরের অন্যতম ছাত্রনেতা ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে যশোরের যে ক’জন ছাত্রনেতা সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তিনি তাদের অন্যতম। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ আন্দোলন চলাকালীন অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তিনি যশোর কালেক্টরেট ভবন থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন এবং সেখানে স্বাধীন বাংলার প্রতীকী পতাকা টাঙিয়ে দেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে যখন সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি আর্মি শহরে দিকে অগ্রসর হয়, তখন তার নেতৃত্বে যশোরের পালবাড়ি অঞ্চলে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। পরে ৪ এপ্রিল তিনি ভারতে যান এবং উত্তর প্রদেশের দেরাদুন জেলায় অবস্থিত চাকতারা ক্যান্টনমেন্টের অধীনে তানডাওয়াতে প্রথম ব্যাচে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল হাই বিএলএফ (মুজিব বাহিনী) ঝিকরগাছা ও চৌগাছা থানার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঝিকরগাছা ও চৌগাছা অঞ্চলে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ নেন।
১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠিত হলে গাজী আব্দুল হাই ওই দলে যোগদান করেন এবং ৮০’র দশকে বিভিন্ন সময়ে জাসদের যশোর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে গাজী আব্দুল হাই ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ এর শেষভাগ পর্যন্ত কারাভোগ করেন। এই সময়ে তিনি যশোর সিটি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।