মরার ওপর খাড়ার ঘা কৃষকের
প্রিয়ব্রত ধর, সুন্দলী: ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। অপেক্ষাকৃত ডাঙ্গা এলাকার কিছু বিলে কৃষকেরা নিজেদের চেষ্টায় পাম্প দিয়ে সেচে শুকিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। তবে গত ২-৩ দিনের বৃষ্টিতে ওই সব এলাকার কাটা ধান ক্ষেতে পানি জমে ধান ভেসে রয়েছে। এতে ওই এলাকার কৃষকের ওপর মরার ওপর খাড়ার ঘা পড়েছে।
অভয়নগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বোবো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ভবদহ জলাবদ্ধতা এলাকায় কৃষকের প্রচেষ্টায় প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এছাড়া মণিরামপুর, কেশবপুর, ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার ভবদহ জলাবদ্ধতা এলাকায় আরো কিছু জমিতে কৃষকেরা পাম্প দিয়ে পানি সেচে শুকিয়ে বোরো আবাদ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবদহ এলাকার ওই সব বিলে বোরো ধানের চাষের জমির পাশে বাঁধ। বাঁধের পাশের জমিতে এখনো বুক সমান পানি। বাঁধ ভেঙ্গে গেলে ডুবে যাবে পাকা ধান। বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকেরা এমন আশংকা করছেন। গত ২ দিনের বৃষ্টিতে অনেকের কাটা ধান পানির ওপর ভাসছে। কৃষকেরা ধান নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে ওই ধান ডাঙ্গায় তুলছেন। এতে অনেক ধান ঝরে যাচ্ছে ও ভেজা ধানে গাছ গজিয়ে যাচ্ছে। খরচ হচ্ছে বেশি।
সুন্দলী গ্রামের অশান্ত ধর জানান, তার এলাকার একটি বিল এক মাস যাবত পাম্প লাগিয়ে শুকানো হয়। বিল শুকানোর জন্য তাকে দুই বিঘা (৮৪ শতাংশ) জমিতে প্রায় ৫ হাজার টাকা গুণতে হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য খরচ বাবদ বিঘা প্রতি আরো প্রায় ১৫ হাজার টাকা হয়েছে। উৎপাদিত ফসল তিনি সারা বছরের খোরাক হিসাবে ঘরে তুলে রাখবেন। কিন্তু গত সোম ও মঙ্গলবারের ভারি বৃষ্টিতে কাটা ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। তিনি ওই ধান অতিরিক্ত শ্রমিক খরচ করে ডাঙ্গায় তুলে শুকাতে দিয়েছেন। এতে তার অনেক ধান ঝরে গেছে এবং খরচও বেশি হচ্ছে। তার মতো অনেক কৃষক এসব কথা জানান।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা গোলাম সামদানী বলেন, ‘আমরা কৃষকদের পাকা ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো জানান, ভবদহ এলাকার কিছু কাটা ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এতে তেমন কোন ক্ষতি হবে না।’ সরেজমিনে মাঠ ঘুরে দেখা যায় কৃষক কাজে ব্যস্ত। তবে বিঘা প্রতি যে উৎপাদন খরচ হয়েছে তা বিক্রয় মূল্যের চেয়ে কনেক কম। বেশির ভাগ কৃষকের অভিযোগ সরকারিভাবে কোন প্রকার সহায়তা বা কোন প্রকার পরামর্শ তাদের কাছে পৌঁছায় না। নিজেদের মত করে নিজোরাই বোরো চাষ করে ঘরে ফসল তুলছে।