১৮৮৬ সালে আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয় মহান মে দিবস। সেদিন দৈনিক আটঘন্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে সমবেত হয়েছিল। পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে তাদের আন্দোলনকে প্রতিহত করে।
ব্যক্তিগত শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পুঁজির উন্নয়নে এক সময় শ্রমিকের শ্রমকে পুঁজিতে পরিণত করার জন্য শ্রমিকের শ্রমকে শোষণ করা হয়েছে। পুঁজিবাদীদের শিল্প উন্নয়নের শুরু থেকে এটাই ছিল তাদের শ্রমিক ব্যবস্থাপনার কৌশল। এ অমানবিক কৌশলের শুরুতে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির বিষয় থেকেছে উপেক্ষিত। শিল্প কারখানার মালিকেরা তাদের শ্রমিকের বাড়তি কোনো সুযোগ প্রদান না করে মানসিকভাবে তাদের কাজের যন্ত্র বা শ্রমদাস হিসেবে বিবেচনা করতে পছন্দ করেছে।
যেদিন এই উৎপাদন অপকৌশল, শ্রম শোষণ এবং উপার্জিত পুঁজির বিকাশ ও তাদের অধিকার আদায়ের দাবি সামনে এসেছে সেদিন থেকে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের আন্দেলন শুরু হয়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে। পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস এই অধিকার আন্দোলনের ফসল।
এর তিন বছর পর ফরাসী বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। সেই থেকে পহেলা মে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক
শ্রমিক সংহতি দিবস।
এ ঘটনার আগে শ্রমিকদের কাজ করতে হতো দৈনিক ৯ থেকে ১৮ ঘন্টা। সেটা ছিল পুঁজিপতিদের স্বার্থে অমানবিক পরিশ্রম। দাসত্ব জীবন ছিল কারো কারো। মালিক পক্ষের ইচ্ছায় শ্রমিকদের ওপর চলতো নানাবিধ নিষ্ঠুর নির্যাতন।
সে সময় বিশ্বের কোথাও শ্রমিক আইন ছিল না। শ্রমিকদের মানবিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার বলতে কিছুই ছিলনা।
স্বাধীন বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলওর চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়ন ও শ্রমিকদের শোষণ চিত্র ভিন্নতর ছিল।
বর্তমান বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ধারণার সাথে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার শ্রমিকের শোষণ ও বঞ্চনার চিত্র মাত্রাগতভাবে ভিন্ন।
বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্রয়োজনে সরকারিভাবে শ্রম আইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন করে শ্রমিকের স্বার্থ নিশ্চিত করার বিধান করেছে। বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও সেবাচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শ্রমিকের সার্বিক সার্থ, সুস্থতা ও কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে।
তারপরেও আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকেরা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে আছে। রাজধানীর বাইরে বাংলাদেশের জেলা শহরের শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকের সুবিধা উন্নয়ন আরো শ্রমিক বান্ধব হওয়া দরকার। বিশেষ করে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানে একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য মালিক শ্রমিক সমন্বয়ে কমিটি তৈরি করা। জরুরি নির্গমনের জন্য জরুরিপথ সিঁড়ি বাধামুক্ত থাকা নিশ্চিত করা। জরুরি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সুবিধা, শ্রমিক কর্মচারীদের শিশু প্রতিপালনে শিশু বান্ধব করা। নারী পুরুষের জন্য পৃথক টয়লেট ব্যবস্থা রাখা, ১৬ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া বিশুদ্ধ পনীয় জলের ব্যবস্থা রাখা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের উপযুক্ত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি থাকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে মালিক শ্রমিক ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্যসম্মত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।