নিজস্ব প্রতিবেদক: ভালো বেতনের প্রলোভনে পড়ে কিরগিজস্থানে শ্রম পাচারের শিকার হয়েছেন ১৩ বাংলাদেশি। এরমধ্যে ছয়জন বর্তমানে দেশটির একটি সেল্টার হোমে অবস্থান করলেও পাচারকারী চক্রের হাতে বন্দি রয়েছে আরো সাতজন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের উদ্ধারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা চেয়ে দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেছে মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইটস যশোর’।
শ্রম পাচারের শিকার ১৩ জন হলেন, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আসাদ্জ্জুামান (৩৪), মুরাদনগর উপজেলার ওলিউল্লাহ (৩৩), আলমগীর হোসেন (৩৩), দেলোয়ার হোসেন (২৪), আবু মুসা (২৪) ও জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), দেবিদ্বার উপজেলার লিমন (২২), চান্দিনা উপজেলার শরিফুল ইসলাম (৩৪), নরসিংদীর শামসুল ইসলাম (৩৪), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সজল মিয়া (২৭), নারায়নগঞ্জের বন্দর উপজেলার আমির হামজা (৩৪), চুয়াডাঙ্গার বিপুল হোসেন (২৪) ও নুরুজ্জামান (২৮)।
রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, সাত মাস পূর্বে মাহমুদুল হাসান মীর নামক একজন দালাল চুয়াডাঙ্গা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও কুমিল্লার ১৪ জনকে কিরগিজস্থানে গার্মেন্টসে কাজ দেয়ার প্রস্তাব দেন। এজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা করে নেন। প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় কিরগিজস্থানে যাওয়ার পর বেতন হবে ৬শ’ ইউএস ডলার এবং কাজের সময় হবে ৮ঘণ্টা। কিন্তু ওই ১৪ জনকে কিরগিজস্থানে পাঠানোর পর তারা সঠিক কাজ ও মজুরি পাননি। তাদের একটি ছোট কাপড়ের কারখানায় কাজ দেয়া হয়। যেখানে তাদের কোন বেতন দেয়া হচ্ছে না। তাদের বলা হয়েছে মাহমুদুল হাসান মীর তাদের কারখানার মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এজন্য বেতন চাইলে বা বেতন না পেয়ে কাজ করতে রাজি না হলে তাদের উপর চালানো হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ইতিমধ্যে আসাদুজ্জামান, সজল মিয়া, আমির হামজা, ওলিউল্লাহ, লিমন ও বিপুল হোসেন এই ছয়জন পালিয়ে কিরগিজস্থানে ওয়াসিস নামে একটি সংগঠনের সেল্টার হোমে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, ইতিমধ্যে পাচারের শিকার একজন কিছুদিন আগে বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। এছাড়া সাতজন পাচারকারী চক্রের হাতে এখনো বন্দি আছে। এ অবস্থায় বন্দি ও ওয়াসিসের আশ্রয়ে থাকা ১৩ বাংলাদেশি যুবককে দ্রুত দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সেল্টার হোমে থাকা আসাদুজ্জামানের সাথে সংবাদকর্মীদের কথা বলানো হয়। আসাদুজ্জামান বলেন, বেতন চাইলে তাদের মারপিট করা হতো। চাবুক দিয়ে আঘাত করা হতো। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রাইটস যশোরের আইনজীবী তাহমিদ আকাশ ও প্রগতি সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধি আবু মহসিন উপস্থিত ছিলেন।