শাহারুল ইসলাম ফারদিন
অনুমোদন না থাকায় প্রায় দুই মাস আগে যশোরে আট প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু বন্ধ করা হাসপাতাল ও ক্লিনিক পুরোদমে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকির অভাবে সেসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান চলছে ফ্রি-স্টাইলেই। যদিও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে আদেশ অমান্য করে কেউ বন্ধ প্রতিষ্ঠান চালু করলে তারা ছাড় পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোর শহরের অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্ট সেন্টার। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে ওঠা অধিকাংশের নেই কোনো সরকারি অনুমোদন। এ অবস্থায় ২৮ মে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ শহরের অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে। ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেলের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম অভিযান চালিয়ে ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়। অনুমোদন না থাকায় যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সিএমপি, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, সার্কিট হাউসের সামনে পিস হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ভোলা ট্যাংক রোডের নূরুল ইসলাম ডায়াবেটিস হাসপাতাল ও রোটারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
যারা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে: যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিল্পব কান্তি বিশ্বাস
এর এক সপ্তাহ পরে অর্থাৎ গত ৫ জুন যশোর শহরের জেল রোডে মাতৃসেবা ক্লিনিক এবং বন্ধন হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে একাধিক অভিযোগ এবং চিকিৎসা খাতে নানান ত্রুটি থাকায় দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। অপারেশন ওটিতে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের অভিযোগের সত্যতার ভিত্তিতে বন্ধন হসপিটালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করা হয়। মাতৃসেবা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ এবং থানায় মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু সেইসব বন্ধ করা ক্লিনিকে চলছে পুরোদমে চিকিৎসা ব্যবসা। গত দুইদিন সরেজমিন পরিদর্শনে সেব ক্লিনিক চালু রেখে কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। নার্স-আয়ারা বলছেন, কাগজপত্র ত্রুটি থাকায় কযেকদিন বন্ধ ছিলো। কাগজপত্র সব ঠিক করে আবার কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। বন্ধ হওয়া এসব প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানে না থেকেও কর্মচারী দিয়ে কৌশলে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তবে ভর্তি রোগী ও স্বজনরা বলছেন, এসব ক্লিনিক যে অবৈধ তা তারা জানেন না।
গতকাল সন্ধ্যা ৬ টায় মাতৃসেবা ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, অফিস রুমে লাইট বন্ধ করে নার্স-আয়া ও স্টাফরা চেয়ারের উপর পা তুলে বসে আছেন। হাসপাতালটি স্বাস্থ্য বিভাগ বন্ধ করার পরও কিভাবে চালু করা হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন আমরা সঠিক বলতে পারবো না। স্যারকে ডেকে দিচ্ছি; স্যারের সাথে কথা বলুন। অপেক্ষায় রেখে কিছু সময় পর এসে জানান স্যার এখন নেই পরে আসুন। কয়েকবার যেয়েও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তার দেখা পাওয়া যায়নি।
সেন্ট্রাল হাসপাতাল পরিচালক জিয়াউর রহমানের কাছে বন্ধের নির্দেশনার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কীভাবে করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো নোটিশ নেই। আমার কাছেও এমন কোনো তথ্য নেই। আমাদের লাইসেন্স করা আছে। আমাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে বলা হয়েছিল তা আমরা করেছি।
যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ পুনরায় পাওয়া তবে স্থায়ীভাবে বন্ধ করবো : ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক
পিস হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বন্ধের নির্দেশনার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কীভাবে করছেন জানতে চাইলে তারা জানান আমাদের কাগজপত্র সব ওকে আছে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক বলেন, ‘আমাদের তো ম্যাজিস্ট্রেসি যে পাওয়ার, সেটি অ্যাপ্লাই করিনি। আমরা বলে দিয়েছি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রতি আনিত অভিযোগ পুনরায় পাওয়া গেলে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ ও জরিমানা করব।’
এখনও সেগুলো খোলা আছে কীভাবে- জানতে চাইলে ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক বলেন, ‘আমি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তাদের খোলার পাওয়ার আছে, খুলতে পারে। এখন কেউ যদি ওপেন করে এর দায়দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে। পরবর্তী সময়ে আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানা বা অন্য কিছু করব। ‘আমরা স্টেপ বাই স্টেপ করছি। আপনি খোলা পেয়েছেন, জানালেন। আমরা যেকোনো মুহূর্তেই আবার অ্যাকশনে চলে যাব।’
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিল্পব কান্তি বিশ্বাস বলেন, তারা জেলার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মানহীন অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যারা তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।