জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :
যশোরে শুরু হয়েছে আমন ধানের চাষ। চলতি সপ্তাহে শ্রাবণের ধারায় মাঠ-ঘাটে যতটুকু পানি জমেছে, সেই পানিতেই চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন কৃষক। কৃষি বিভাগ বলছে- আমন চারা রোপণে সাধারণত ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। কিন্তু যশোরে সেই পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। আর যশোর বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রাধীন আবহাওয়া অফিস জানায়, গত শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যশোরে বৃষ্টি হয়েছে ১০৮ মিলিমিটার। তবে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপণ হয়েছে বলে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর যশোর জেলায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েন কৃষক। শেষ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের পরামর্শে সেচের পানি দিয়ে প্রস্তুত করা হয় আমনের বীজতলা। চলতি সপ্তাহে শ্রাবণের ধারা শুরু হলে মাঠে নেমে পড়েন কৃষক।
যশোর কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী রফিকুল ইসলাম দৈনিক কল্যাণকে বলেন, সাধারণত আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয় আমনের চাষাবাদ। কিন্তু প্রকৃতির বিরুপ আচারণে এক ফোটা বৃষ্টি হয়নি আষাঢ়ে। শরৎ ও মেহন্তকালের মতো শ্রাবণে আকাশে মেঘের ঘনঘটা ছিল কিন্তু হচ্ছিল না বৃষ্টি। অনাবৃষ্টির কারণে হাহাকার চলছিল কৃষককূলে। এ পরিস্থিতিতে বীজতলা প্রস্তুতকরণে সেচের পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাঝে-মধ্যে কিছু বৃষ্টি হয়েছে। কাঙ্খিত বৃষ্টি না হলেও ক্ষেত প্রস্তুত ও চারা রোপণের উপযোগী হয়েছে। কৃষকও পুরোদমে চারা রোপণ শুরু করেছেন। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করতে পেরেছেন কৃষক।
যশোর সদরের পাচবাড়িয়া গ্রামের কৃষক সজিব হোসেন জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প ও ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনের সেচের পানি দিয়ে আমনের বীজতলা প্রস্তুত করেছিলাম। এরমধ্যে প্রায় এক মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু চড়াদামে সেচের পানি কিনে চারা রোপণের সাহস পাইনি। চলতি সপ্তাহে যতটুকু পানি হয়েছে তাতে ক্ষেত প্রস্তুত করে চারা রোপণ করছি।
মধুগ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শ্রাবণের তৃতীয় সপ্তাহে যতটুকু বৃষ্টি হয়েছে তা দিয়ে চারা রোপণের কাজ হয়তো শেষ করা যাবে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে সেচের ওপর নির্ভর করতে হবে চাষীর। এতে খরচ বাড়বে কয়েকগুণ।
হৈবতপুর ইউনিয়নের কৃষক কেরামত আলী বলেন, বৃষ্টি নির্ভর আমন ধান রোপণের জন্য খনার বচন রয়েছে-‘আষাঢ় মাসে বান্ধে আইল, তবে খায় বহু শাইল, আষাঢ়ে পনের শ্রাবণের পুরো ধান লাগাও যতো পারো’। তিনি বলেন, এই খনার বচনের মানে হলো-আষাঢ় মাসে জমির আইল বেঁধে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমন ধান লাগাতে হবে। কিন্তু চলতি বছর বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের পানি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত কিছু জমিতে সেচের পানি দিয়েই চারা রোপণ করতে হচ্ছে।
যশোর বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রাধীন আবহাওয়া অফিস জানায়, গত শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যশোরে বৃষ্টি হয়েছে ১০৮ মিলিমিটার। তবে প্রতিদিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে আবহাওয়া বার্তায়।