নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইজিবাইক চালক বিল্লাল হোসেন মিয়াদ (২৮) খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রিকশা ছিনতাইয়ের জন্য তাকে হত্যা করা হয়। আটক দুইজন গতকাল আদালতে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।
বিল্লাল হোসেন মিয়াদের বাড়ি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ছোট বাদুড়া গ্রামে বর্তমানে শ্বশুর বাড়ি যশোর সদর উপজেলার পাগলাদাহ মাঠপাড়া গ্রামে বসবাস করতো।
আটক দুইজন হলেন যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া কাঁঠালতলার তোতা মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল কাদের মোল্লা (২৩) ও একই এলাকার ভাড়াটিয়া জুয়েল শেখ (২৫)। তাদের দেখানো মতে উদ্ধার করা হয় নিহত বিল্লালের ব্যাটারি চালিত রিকশা, মোবাইল, হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাকু ও একটি গামছা।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, ১৬ জুলাই শনিবার দুপুর ১২ টায় কাঁঠালতলা মোড় থেকে আব্দুল কাদের মোল্লা ও দুপুরে তিতাসের বাড়ির সামনে থেকে জুয়েল শেখকে আটক করা হয়। এরপর তারা হত্যার বিবরণ ও কারণ জানায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এস আই ডিএম নূর জামাল জানান, আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২১ জুলাই সন্ধ্যার দিকে কাঁঠালতলায় বসে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বিল্লাল হোসেন মিয়াদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিনই রাত অনুমান সাড়ে ৮ টায় অভিযুক্ত কাদের ফোন করে বিল্লালকে শহরের কাঁঠালতলা মোড়ে আসতে বলে। এক পর্যায়ে তারা রিকশাযোগে খিতিবদিয়া গ্রামে যায়। তারা খিতিবদিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলামের বাড়ির সামনে রিকশাটি রেখে রেজাউল সরদারের মেহগনি বাগানে যায়। মেহগনি বাগানে যাওয়ার পর অভিযুক্ত জুয়েলের কাছে থাকা রশি দিয়ে পিছন দিক থেকে ভিকটিমের গলায় রশি পেঁচিয়ে ধরে। কাদের তার কোমরে থাকা চাকু বের করে ভিকটিম বিল্লাল হোসেন মিয়াদের পেটের বাম পাশে ও রানে আঘাত করে। বিল্লাল মাটিতে পড়ে গেলে তার কোমরে থাকা গামছা চাকু দিয়ে কেটে দেয়। জুয়েল গামছা দিয়ে দুই পা বাঁধে। এসময় চাকু দিয়ে বিল্লালকে জবাই করে হত্যা নিশ্চিত করে। তার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে সিম ও মেমোরিকার্ড খুলে বাগানের মধ্যে ফেলে দেয়। এরপর তারা রিকশা নিয়ে চলে যায়। ২২ জুলাই রিকশাটি বিক্রি করে দেয়। অভিযুক্ত কাদের মোল্যা ও জুয়েল শেখকে রোববার বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলামের আমলি আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এর আগে ২১ জুন বিকেলে ৫টার দিকে রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন মিয়াদ। অনেক রাত হলেও বাড়িতে না ফেরায় স্ত্রী শারমিন মোবাইলে কল করেন। কিন্তু ফোন বন্ধ পান। অনেক জায়গায় খোঁজাখুজি করে না পেয়ে পরদিন ২২ জুন কোতয়ালি থানায় একটি জিডি করেন তার মা রেনু বেগম। জিডির কপি তিনি যশোরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অফিসে জমা দেন। পিবিআই’র এসআই ডিএম নুর জামাল জিডিটি তদন্ত করেন। তদন্তকালে তিনি নিখোঁজ মিয়াদের মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন। কিন্তু তাতে সিমকার্ড ছিলো না।
গত ৩ জুলাই সদরের ক্ষিতিবদিয়া গ্রামের রেজাউলের মেহগুনি বাগানের মধ্যে থেকে একটি কংকাল উদ্ধার করে পুলিশ। কংকালের সাথে পরনের কাপড়ও উদ্ধার করা হয়। ১৬ জুলাই তাকে ফোন করে পিবিআই অফিসে যেতে বলা হয়। মিয়াদের স্ত্রী শারমিন সেখানে গেলে তাকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ক্ষিতিবদিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার কংকালের সাথে পরিহিত লুঙ্গি তাকে দেখানো হয়। ওই লুঙ্গি দেখে তিনি কংকালটি তার স্বামীর বলে শনাক্ত করেন।