নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যশোরে দুইদিনব্যাপি গণটিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। নিবন্ধন ছাড়াই যশোর ঈদগাহ মাঠে শুরু হওয়া সিনোফার্মের টিকা ১০ হাজার জনকে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও স্বাস্থ্যবিভাগ দিতে পেরেছে মাত্র পাঁচ হাজার ২৭৬ জনকে। করোনার টিকা প্রদানে মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও স্থানীয় মানুষের মাঝে করোনার টিকা নিতে অনীহা রয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত টিকা থাকলেও টিকাগ্রহীতার অভাবে টিকা দিতে পারছে না স্বাস্থ্যবিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল শনিবার ও রোববার পর্যন্ত এই কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই দুই দিনেই শতভাগ নাগরিককে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা সম্ভব হবে প্রত্যাশা সিভিল সার্জনের।
এদিকে, গণটিকা গ্রহণে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে আছে নারীরা। দুই দিনেই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্বাচনী ভোট কেন্দ্রের মতো দীর্ঘ লাইন ধরে তারা টিকা নিয়েছেন।
যশোরে শতভাগ নাগরিককে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে বুধবার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে শুরু হয় দুইদিন ব্যাপী গণটিকা কার্যক্রম। নিবন্ধন ছাড়াই বুধবার ও বৃহস্পতিবার টিকা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ২৭৬ জন। যদিও বা দুই দিনে স্বাস্থ্যবিভাগের ১০ হাজারের অধিক ডোজ টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। করোনাভাইরাসের গণটিকাদানের কর্মসূচিতে প্রথম দিনে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও দ্বিতীয় দিনে মানুষের আগ্রহ ছিলো কম। প্রথমদিনের মতো ব্যস্ততাও ছিলো না টিকা প্রদান কাজের সাথে নিয়েজিত পৌরসভা ও সিভিল সার্জনের নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকদের। তাদের ভাষ্য, গণটিকার প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে কিছুটা লোকের আগ্রহ কম দেখছি। তার পরেও যারা আসবে তাদের সবার টিকা দেয়া হবে। তবে এই টিকা প্রদানে টিকাগ্রহণকারী কোন সনদ পাচ্ছেন না, সেই কারণেই এই টিকা গ্রহণে কিছুটা অনীহা রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
শহরের রেলগেট ডালমিল এলাকার হোসেন নামে এক ইজিবাইক চালক বলেন, নানান কাজে ব্যস্ত থাকায় এতোদিন টিকা নেয়া হয়নি। তাছাড়া টিকা গ্রহণের আবেদন ও সময়মতো মেসেজ না আসায় এতোদিন টিকা নেইনি। সবুজ হোসেন নামে আরেক রিকসাচালক বলেন, রিকসা না চালালে বাড়ির বাজার হয় না। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে একদিন পার হয়ে যায়। ফলে ওই দিনের রিকসা ভাড়া তোলা সম্ভব হয় না। তাছাড়া টিকা নেয়ার রেজিস্ট্রেশনসহ নানান ঝামেলায় টিকা নেয়া হয়নি। দুই দিনের এই গণটিকা গ্রহণে নারীদের ছিলো ব্যাপক আগ্রহ। সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইনে তারা ব্যাপক উৎসাহের সাথে টিকা নিয়েছেন। দেড় বছরের শিশু কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেগম বলেন, বেজপাড়া তালতলা থেকে এসেছি। দুই দিন আগে এক ডাক্তার টিকা না নেওয়ায় আমাকে চিকিৎসা দেয়নি। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় খবর শুনেছি টিকা না নিলে কোন সেবা দেয়া হবে না। তাই শাশুড়িকে সাথে নিয়ে টিকা নিতে এসেছি।
যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, জেলায় করোনার সংক্রমণ রুখতে শতভাগ ভ্যাকসিনেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যশোর ঈদগাহ মাঠে দুই দিনে ১০ হাজারের বেশি লোককে টিকা প্রদানের সক্ষমতা থাকলেও মাত্র ৫ হাজার লোককে টিকা দিয়েছি। মানুষের মাঝে টিকা গ্রহণে অনিহা খুব। তারপরও আগামী শনিবার ও রোববার এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এই দুই দিনেও যারা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও নিবন্ধন কার্ড নিয়ে আসবে তাদেরকে টিকা প্রদান করা হবে। আমাদের টিকার কোন ঘাটতি নেই। সব পর্যায় থেকে টিকা গ্রহণের জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছেন তারা। এ ছাড়া জেলার আরও সাতটি উপজেলায় একযোগে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেখানেও ইউনিয়নভিত্তিক তালিকা করে গণটিকা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা গ্রহণের আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়মিত প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ প্রদান করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জেলায় করোনা শুরু থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৩ হাজার ৪৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ্য হয়েছেন ২১ হাজার ৪৩৪ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৫১৮ জন। এছাড়া জেলাটিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে ১৯ লাখ ৯০ হাজার ১৬৩ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৮৮ জন। এছাড়া তৃতীয় ডোজ অর্থাৎ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৩২ হাজার ৬৬১ জন।