নিজস্ব প্রতিবেদক :
যশোরের চৌগাছার যাত্রাপুর বাওড়। ৩৩ একরের এই বাওড়টি ভোগদখলে থাকা তিনটি পরিবার বলছে তারা উচ্চ আদালত থেকে নিজেদের পক্ষে রায় পেয়েছেন। তবে জেলা প্রশাসনের তথ্য এখনো মামলা অব্যাহত রয়েছে। এই উপজেলার চাকলা বিল, মর্জাদ বাওড় ও বেড়গোবিন্দপুর বাওড় নিয়েও মামলা চলছে। এভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ২০ বিল বাওড় নিয়ে মামলা রয়েছে। মামলা চলমান থাকায় বছরের পর বছর ইজারা দিতে পারছে না যশোর জেলা প্রশাসন। এতে একদিকে বড় অংকের টাকা রাজস্ব হাতছাড়া হচ্ছে অন্যদিকে বিল বাওড়গুলো লুটেপুটে খাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।
জলমহালের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে যশোর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করা হয়েছিল। প্রাপ্ত তথ্য মতে, যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০ বিল বাওড় নিয়ে মামলা চলছে। এরমধ্যে শার্শার কন্যাদহ বাওড়, মহিষাকুড়া, রাজগঞ্জ বাওড়, বাহাদুরপুর বাওড়, চৌগাছার মুক্তেশ^রী (বলিদাহ), চাকলা বিল, যাত্রাপুর বাওড়, মর্জাদ বাওড়, বেড়গোবিন্দপুর বাওড়, যশোর সদরের বুকভরা বাওড় (সমঝোতা), জগহাটি বাওড়, হামিদপুর, ভৈরব নদের সিঙ্গিয়া রেলস্টেশন থেকে বসুন্দিয়া খাল পর্যন্ত, ঢাকা রোড ব্রিজ বারান্দীপাড়া থেকে ঢাকা রোড ব্রিজ ঘোপ পর্যন্ত মামলা রয়েছে। এছাড়া অভয়নগরের ধুলগ্রাম বিল, বিলবালিয়া ও পোড়াখালি বাওড়, মণিরামপুরের খেদাপাড়া বাওড় ও খাটুরা বাওড় (সমঝোতা), ঝিকরগাছার কৃষ্ণপুর বাওড় ও উজ্জলপুর বাওড় (সমঝোতা)। মামলা চলমান থাকার কারণে এগুলো বছরের পর বছর ইজারা দেওয়া যায়নি বলে যশোর জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
৯৬১ হেক্টরের মণিরামপুরের খেদাপাড়া বাওড় নিয়ে ২০২০ সালে আদালতে মামলা করা হয়। স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির ক্যাশিয়ার মিজানুর রহমান জানান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথে তাদের ৫০ বছরের একটি চুক্তি হয়েছিল। এর মেয়াদ এখনো ২০ বছর রয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন মেয়াদ শেষের আগেই বাওড়টি ইজারা দিতে চায়। এজন্য তারা আদালতে মামলা করেছেন। সূত্র মতে, খেদাপাড়া বাওড় নিয়ে মামলা হওয়ায় মৎস্যজীবী সমিতির নামে নামেমাত্র ভূমি অফিসে খাজনা দেওয়া হচ্ছে। যদি বৃহৎ এই জলমহলটি ইজারা দেয়া যেত তাহলে কোটি টাকার উপরে সরকার রাজস্ব পেতো।
মামলা চলমান রয়েছে চৌগাছার মর্জাদ বাওড় নিয়ে। এজন্য বাওড়টি ইজারা দেয়া যায়নি। কিন্তু বাওড়টির ব্যবস্থাপক এবং নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে মৌখিক চুক্তিতে ইজারা দিয়েছেন বলে সম্প্রতি মৎস্য ও প্রণি সম্পদ মন্ত্রী, সচিব, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের খাতায় চৌগাছার যাত্রাপুর বাওড়। ৩৩ একরের এই বাওড়টি ভোগদখলে রেখেন তিনটি পরিবার। এদের একজন মঞ্জুরুল আলম। তিনি দাবি করেছেন তার পিতা বিসরকারের কাছে থেকে ১০ একর জমি কিনেছিলেন। আর অন্যরা কিনেছিলেন বাকি অংশ। তবে সরকার এই জমি নিয়ে মামলা করলে তারা উচ্চ আদালত পর্যন্ত যান। সেখান থেকে তাদের পক্ষে রায় হয়েছে। কিন্তু যশোর প্রশাসন বলছে এ বাওড় নিয়ে এখনো মামলা চলছে।
জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, জলমহলসহ সরকারের সব সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। এজন্য আইনজীবী নিয়োগ ও নিয়োগকৃত আইনজীবীদের সাথে নিয়োমিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। দখলদারদের ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।