কৃষি প্রণোদনার জন্য সুপারিশ
জেমস রহিম রানা
অসময়ের বৃষ্টিতে যশোরে ১৭০ কোটি টাকার ফসলহানী হয়েছে। পানিতে তলিয়ে পচে ১১ হাজার ৩১৪ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল সম্পূণ বিনষ্ট হয়েছে। এতে চাষিরা এই বিরাট অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের তালিকা করে তাদের কৃষি প্রণোদনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অকাল বৃষ্টিপাতে আমন ধান, আলু, সবজিসহ অন্যান্য রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনও অনেক ক্ষেত থেকে পানি সরেনি। সেখানে আবাদকৃত রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ, সরিষা, গম ও আলু পচে নষ্ট হচ্ছে।
জেলার কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, তিনদিনের টানা বর্ষণে ১ লাখ ৩০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ১ ১হাজার ৩১৪ হেক্টর জমির ফসলেল সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের এই ফসল নষ্টের পরিমাণ ৫৪ হাজার ১০৯ মেট্রিক টন। যার মূল্য প্রায় ১৭০কোটি টাকা। জেলার সবকয়টি উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ শেষে ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাব এই চূরান্ত করা হয়েচে। কৃষকদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনার বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর উপ পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, প্রাকৃতি দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিগগিরই প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যেই কৃষকদের তালিকা তৈরি শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরিষা চাষিদের ক্ষতির পরিমাণ ৫৭ কোটি ২৩লাখ টাকা, সবজি চাষিদের ৫৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, শীতকালীন সবজি চাষিদের ৫২ কোটি ৩১ লাখ টাকা, মসুর চাষিদের ৩৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা, পেঁয়াজ চাষিদের ৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা, আলু চাষিদের ৪ কোটি ৩ লাখ টাকা, আমন চাষিদের ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ও রসুন চাষিদের ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়াও কোটি ২২ লাখ টাকার ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলে মোট একশ ৬৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা।
জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাস জানান, বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সরিষা চাষিরা।জলার ৪৯হাজার ৩১৩জন সরিষা চাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এছাড়া ২৫ হাজার ১৭৮ মসুর চাষি, ১৮ হাজার ২৭৩ জন বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষি, প্রায় ১৬হাজার আমন চাষি, বোরোর বীজতলা আবাদকারী ১০ হাজার ৫০১ জন, পেঁয়াজ চাষি এক হাজার ৭৬১ জন, গম চাষি এক হাজার ৫৭৬জন ও এক হাজার ৩৮৯ জন মটরশুটি চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া আরও কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে তালিকার বাইরে। সব মিলিয়ে এক লাখ ৩০ হাজার ৬০২ জন চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোর কার্যালয় সূত্রমতে, আবাদ ও উৎপাদনসহ সার্বিক বিবেচনায় শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফসল মসুর ডাল। জেলার ৬২ দশমিক ০৫ শতাংশ মসুর ডাল ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া বোরোর বীজতলা ৪২ দশমিক ১৭ শতাংশ, সূর্যমুখি ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ খেসারি ৩৭দশমিক ২৫ শতাংশ, সরিষা ৩৪দশমিক ৩০ শতাংশ, মরিচ ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, পেঁয়াজ ১৯ দশমিক ১২ শতাংশ, ভুট্টা ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ, আলু ১২ দশমিক ১১ শতাংশ, গম ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ, রসুন ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, সব ধরনের শীতকালীন বিভিন্ন সবজি ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, মটরশুটি ১১ দশমিক ০১ শতাংশ, চীনা বাদাম ১০ দশমিক ২২ শতাংশসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে।