নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের মাঠে বেলুন আর রঙিন কাগজ দিয়ে গেট সাজানো হয়। মাঠে বিছানো কম্বল। এ আয়োজন ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য। এ মাঠে নামাজ আদায় করেন কয়েদি ও হাজতিরা।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সুমন আকন। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন তিনি। তার ঈদ কেটেছে এই কারাগারে। তিনি বলেন, ‘২১ বছরের বেশি ধরে কারাবাস করছি। যশোরের আগে অন্যান্য কারাগারে ছিলাম। এই কারাগারে প্রচুর জায়গা, পানির কোনও সমস্যা নেই। গাছপালাও রয়েছে বেশ। এককথায় পরিবেশটা সুন্দর।’
তিনি জানিয়েছেন, ঈদের দিনটা কারাবন্দিদের জন্য অন্যরকম একটা দিন। এদিন সকালে কয়েদি-হাজতি সবাই গোসল সেরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কিংবা যাদের নতুন জামা-কাপড় থাকে, তারা সেগুলো পরেন। কারা কর্তৃপক্ষ সকালে অন্যদিনের তুলনায় ভিন্ন ও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেন। কারা অভ্যন্তরে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে নানা রঙের বেলুন ও রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়। বাইরের থেকে একজন ইমাম আসেন। তার ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন সবাই। কিন্তু স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে না পারায় মন কাঁদে সবার।
গত চার বছর ধরে সাজা খাটছেন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন অনেক খারাপ লাগে। গত চারটা বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছি। স্বজনদের জন্য মন কাঁদে এদিন। আবার যাদের সঙ্গে থাকি, তাদের সঙ্গে চেষ্টা করি আনন্দ ভাগাভাগি করার। একটা ভালো ব্যাপার আছে, এখানে ঈদের দিন সবাই আমরা একসঙ্গে খাবার খাই, গল্প করে সময় কাটাই।’
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বিত্তবান অনেক বন্দির পরিবার ঈদের আগে দেখা করতে এসে নতুন জামা-কাপড় দিয়ে যান। তারা ঈদের দিন সেগুলো পরেন। তবে অনেক বন্দি রয়েছেন, যাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পরিবারের কেউ দেখা করতে আসেন না। তারা নতুন পোশাক পান না। অন্যদের নতুন পোশাক পরতে দেখলে মন খারাপ হয় তাদের।
কারা সূত্র জানায়, করোনাকালে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারেননি অনেকের স্বজন। তবে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে এক সপ্তাহ পর পর মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান।
কয়েদিরা জানান, জেলার মানবিক মানুষ। তিনি বন্দিদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখেন। ঈদের দিন খাবারের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকে। জেলার নিজ উদ্যোগে কয়েকজনের পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, ‘যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এক হাজার ১২৯ জন বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে কয়েদি ৫৭৪ ও হাজতি ৫৫৫। তাদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৮২ ও নারী ৪৭ জন।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে পায়েস ও মুড়ি দেওয়া হয়। কখনও কখনও পায়েসের স্থলে সেমাই খেতে চান বন্দিরা। বেশিরভাগই ঈদের দিন দুপুরে আমরা পোলাও, খাসি-গরুর মাংসের আয়োজন করি। ক্ষেত্র বিশেষে মুরগির রোস্ট, শুকনো মিষ্টি ও পান-সুপারি থাকে। রাতে সাদা ভাত, রুই মাছ, সবজি অথবা ডাল দেওয়া হয়।’