যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগিদের দুর্ভোগের এক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে দৈনিক কল্যাণে। ১৯ জানুয়ারির পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ৪ শতাধিক রোগী ইনডোরে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ২৫০ জনের খাবার বরাদ্দ থাকে। বাকিদের বাইরে থেকে খাবার আনতে হয়। তবে খাবার পাওয়া আর না পাওয়া সব রোগী ও তাদের স্বজনদের রয়েছে নানা অভিযোগ। খাবারের মান, বাইরে থেকে খাবার আনা এবং ওষুধসহ নানা পরীক্ষা নীরিক্ষার পেছনে সবারই গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। অধিকাংশ রোগী ও তাদের স্বজনরা ভয়ে মুখ খুলতে চান না। খাবার না পেলেও ফ্লোরে জায়গা পেয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন-এটাই যেন তাদের জন্য অনেক। সত্যি বললে ডাক্তার তো দূরের কথা, নার্স-ওয়ার্ড বয়রাও উকি দিয়ে দেখবে না। তখন বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে। রোগীর চিকিৎসা করাতে এসে অনেক স্বজন রোগী হয়ে বাড়ি ফেরেন। অর্থাভাবে তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। টয়লেট-বাথরুমের বেহালদশা। দুর্গন্ধময় বাথরুম থেকে বেরিয়ে খাবার মুখে তুলতে পারেন না অনেকে। সেই সাথে বেশিরভাগ ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বাইরে থেকে কিনতে হয়। ইসিজির মতো ছোট-খাটো পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্যেও ক্লিনিকে পাঠানো হয়। দুপুর ১২টার পর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে লোক পাওয়া যায় না। কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলে বলা হয় আজ আর হবে না, বাইরে থেকে করিয়ে আনেন। তারা নির্দিষ্ট কিছু ক্লিনিক ও ডায়ানগস্টিক সেন্টারে পাঠান। এর ফলে কাড়ি কাড়ি টাকা চলে যায় ওষুধ ও পরীক্ষা নীরিক্ষার পেছনে।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল জেলার সর্বোচ্চ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র। কিন্তু রোগিদের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। অথচ সরকার এর জন্য মোটেই দায়ী নয়। দায়ী এ হাসপাতালে কর্তব্যরত কর্তাব্যক্তিরা। তারা বিষয়গুলো দেখেন না। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে মাসের দিকে। কবে মাস যাবে আর এক কাড়ি টাকায় পকেট ভরে বাসায় ফিরবে।
সরকারি হাসপাতাল মানে মনে হয় রোগিদের প্রতি অবহেলা আর উদাসিনতা। যদি কেউ বলেন একটু কষ্ট তো হবেই, তাহলে তাদের উচিত এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্টটা কাকে বলে তা উপলব্ধি করা। দায়িত্ব নিলে কর্তব্য পালন করতে হবে। উদ্ভুত পরিস্থিতির মীমাংসা তাদেরই করতে হবে। মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে টাকা ঢালছেন আর কর্মকর্তরা সে সেবা নিশ্চিত না করায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে তা হতে পারে না। কাউন্টার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেছেন সমস্যা সমাধানে কাউন্টার বাড়ানো হবে। কিন্তু না বাড়িয়ে গ্রাম্য কথায় ‘আঙুলে পাচিল’ দিচ্ছেন কেন। মানুষের দুর্ভোগ কোন মাত্রায় উঠলে কাজটি তিনি করবেন এটাই আজ প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তাতে মানুষ এখানে চিকিৎসা না নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ছুটবে। আর এজন্য তো ওই সব হাসপাতালের দালালরা আছেই। চিকিৎসা নিতে এসে রোগিরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এসব সহমর্মীতার কথা উচ্চারণ করে রোগি ভাগাতে দালালদের বেশ সুবিধে হচ্ছে। এ কথা সবার জানা বেসরকারি হাসপাতাল মানে গলাকাটা প্রতিষ্ঠান। সরকার যেখানে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছেন সেখান বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হবে কেন। আমরা মনে করি মানুষের সেবায় বিশেষ করে সাধারণ গরিব মানুষের সেবায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের যত অব্যবস্থার নিরসন হোক। মানুষ চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ জীবন যাপন করুক।