রায়হান সিদ্দিক: ভোজন রসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকেই প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপূণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। যখনই পিঠা-পায়েস, পুলি কিংবা নাড়ুর কথা ওঠে তখনি যেন শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ও মনে ভেসে ওঠে।
পৌষপার্বণের শেষ দিনে গতকাল শুক্রবার যশোর পৌরপার্কে তির্যকের নান্দনিক পিঠা উৎসব ও হারানো দিনের গান অনুষ্ঠিত হয়। টেবিলের উপর সাজানো বাহারি সব পিঠা অপর পাশে পুরানো দিনের গানের তালে মোহিত হয় শত শত মানুষ।
জামাই ভোলানো পিঠা, ফুলকারি, অনামিকা, রসের বরফি, পাতা বাহারী, রসের ফুল, কিমা পুলি, আলু বাহারী, মরিচ পিঠা, চুসি, ঝিনুক, নকশি বিচিত্র নামের এই পিঠাগুলো সংগঠনের কর্মিরা বাড়ি থেকে বানিয়ে নিয়ে আসে। প্রতি বছরই শীতের মাঝামাঝি সময়ে সংগঠনটি আয়োজন করে থাকে এই উৎসবের।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস রতন বলেন, শীতের সময় বাহারি পিঠার উপস্থাপন ও আধিক্য দেখা যায়। বাঙালির লোক ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। যান্ত্রিক সভ্যতার এই ইট কাঠের নগরীতে হারিয়ে যেতে বসেছে পিঠার ঐতিহ্য। সময়ের স্রোত গড়িয়ে লোকজ এই শিল্প আবহমান বাংলার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠলেও এ যুগে সামাজিকতার ক্ষেত্রে পিঠার প্রচলন অনেকটাই কমে এসেছে। তাই আমরা প্রতি বছরই পিঠা উৎসবের আয়োজন করে থাকি যাতে নতুন প্রজন্ম বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ভুলে না যায়।
উৎসবের আহবায়ক আল সুফিয়ান আনন বলেন, ছোট বেলায় আমরা অপেক্ষা করতাম কবে নতুন ধান উঠবে আর বাড়িতে পিঠা বানানোর ধুম পড়বে বন্ধু বান্ধব নিয়ে শীতের রাতে মজা করে পিঠা খাওয়ার আমাদের সেই শৈশবটি ছিলো চমৎকার রোমাঞ্চনিয়। তবে এই যুগে আমাদের সন্তানরা অনেক পিঠার নামই জানে না, কর্ম ব্যস্ততায় আমাদেরও সুযোগ হয় না তাদেরকে সেই সময় দেয়ার। তাই আমি মনে করি তির্যক যশোরের এই পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে আমাদের সন্তানরা বাঙালির ঐতিহ্য ও পিঠা-পুলির বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারবে।
পিঠা উৎসবের বাহারী পিঠা ও পুরানো দিনের গানের মোহনায় মোহিত হয়ে জেলা পূজা উদযাপনের সাধারণ সম্পাদক তপন ঘোষ বলেন, তির্যকের এই আয়োজন আমার ছোটবেলাকে মনি করিয়ে দিলো। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য আমরা শহরের মানুষেরা প্রায় ভুলেই যেতে বসেছি। একদিকে পুরানো দিনের কালজয়ী গান অন্যদিকে বাহারী সব পিঠা সত্যিই মনকে রোমাঞ্চিত করেছে।
উৎসবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পৌর মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ, সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটু, সহ সভাপতি আনিসুর রহমান পিন্টু, নাট্য বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর হোসেন বাবু, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলুসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।