ডায়রিয়া ওয়ার্ডের তিন বেডে ১৮
মেডিসিন ওয়ার্ডের ২৬ বেডে ৮৭
শিশু ওয়ার্ডের ২৪ বেডে ৬৫
শাহারুল ইসলাম ফারদিন :
এখন মধ্য আষাঢ়। প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টি হলেও কমছে না গরম। এই আবহাওয়ায় ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সীরা।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জসিম উদ্দিনের দেয়া তথ্য মতে, গরমে ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগী বাড়ছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অনেকে সিট না পেয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডের ভিতরের মেঝেতেও জায়গা না হওয়ায় অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায় বা করিডোরে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কর্তব্যরত ইনচার্জ সিনিয়র নার্স দিলারা খাতুন জানান, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১২ জন রোগী ভর্তি থাকলেও বেলা ১১টার সময় ৬জন বেড়ে দুইশিশুসহ মোট ১৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছে। গত শনিবার থেকে এ ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখানে রোগীর শয্যা আছে মাত্র ৩টি। কিন্তু গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী ওয়ার্ডে ভর্তি থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন রোগী ওয়ার্ডে নতুন করে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন। ৩৫-৪৫ বয়সের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি।
‘‘যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল
হাসপাতালে গরমে ডায়রিয়া, ভাইরাস
জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগী বাড়ছে
— চিকিৎসক জসিম উদ্দিনের
হাসপাতালের বহিঃবিভাগের টিকিট কাউন্টারের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ প্রায় পাঁচশত টিকিট বেশি বিক্রি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার টিকিট বিক্রি হয়েছিল ১২২১টি, শনিবার বিক্রি হয়েছিল ১৪০৫টি। রোববার বিক্রি হয়েছে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি। এদের বেশির ভাগই জ¦র-ঠান্ডা, শ্বাসকষ্টজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে আসছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শিশু কনসালটেন্ট ডাক্তার আব্দুস সামাদ জানান, প্রচ- গরমের কারণে ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন শতাধিক রোগী। আড়াইশ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসাধীন রয়েছে সাড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী। এছাড়া বহিঃবিভাগে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে রোগীদের এ চিত্র দেখা যাচ্ছে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স জানান, পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর শয্যা রয়েছে ২৬টি। কিন্তু এ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৮৭ জন। একই চিত্র হাসপাতালের শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে। শিশু ওয়র্ডে ২৪টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৬৫ শিশু।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৯ বছর বয়সী শিশু নাহিদ হাসান কাকনের মা সালমা বেগম বলেন, বাচ্চার হঠাৎ করেই বমি ও ঘন ঘন পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছি।
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সদরের রূপদিয়া জিরাট এলাকার গৌতম বসু (৫০)। তিনি বলেন, গত তিনদিন আগে বমি, ঘন ঘন পায়খানা ও জ্বর শুরু হয়। কোন উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হই।
বমি, জ্বর ও মাথা ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন শহরের খালধার রোড এলাকার আলি হোসেন (২৯)। তিনি জানান, হঠাৎ প্রচ- মাথা ব্যাথা ও বমি শুরু হয় সঙ্গে জ্বরও আসে।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার হিমাদ্রি শেখর সরকার জানান, গরমের অসুস্থ হয়ে গত কয়েকদিন ধরে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন অনেক রোগী। বাইরের পঁচা-বাসি খাবার, মৌসুমি ফল মাত্রাধিক খাওয়া আর দূষিত পানির কারণে লোকজন ডায়রিয়া ঠান্ডা জ¦রসহ বিভিন্ন মৌসুমী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।