যশোরে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা ঠকছেন ভোক্তারা
শাহারুল ইসলাম ফারদিন: যশোর শহরের দড়াটানার ফুটপাত থেকে সোমবার রাতে কাজীপাড়ার বাসিন্দা শাকিল আহমেদ ১৮০ টাকা দিয়ে ৫০টির দুই আঁটি লিচু কেনেন। বিক্রেতা ১০০টি লিচু রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। কিন্তু লিচু বাসায় নেয়ার পর ক্রেতা গুণে দেখতে পান ৮৫টি রয়েছে। ১৫ টি লিচু কম পান তিনি। দাম হিসেবে ২৭ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি।
শুধু শাকিল আহমেদ নন, অনেকেই এ রকম প্রতারিত হচ্ছেন। বিক্রেতাদের কাছে প্রতি আঁটিতে কয়টি লিচু রয়েছে জানতে চাইলে আঁটিতে ৫০ কিংবা ১০০টি রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। অনেক সময় কৌশলে তারা বলেন, দুচারটি কমবেশি থাকতে পারে।
মধুমাসের অন্যতম ফল লিচু পাওয়া যাচ্ছে যশোরের বাজারে। তবে দেশের বিখ্যাত দিনাজপুর ও ঈশ^রদির লিচু এখনো যশোরের বাজারে ওঠেনি। কিন্তু প্রিয় এ ফল কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তা। খুচরা বিক্রেতারা লিচুর আঁটিতে ৫০টি কিংবা ১০০টি বলে দিলেও গণনা করে কম পাওয়া যাচ্ছে।
মণিহার ফলপট্টির হাসান হোসেন ফল ভা-ারের স্বত্ত্বাধিকারী সুমন শেখ বলেন, তার আড়ৎ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার লিচু বিক্রি হয়। আর যশোরের ফলপট্টি থেকে বিভিন্ন আড়ৎ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ লাখ লিচু বিক্রি হয়। সেই হিসাব মতে, একশত লিচুতে ১৫ থেকে ২০টি লিচু কম দিলে ১৫ লাখ লিচুতে কম দেওয়া হয় প্রায় আড়াই লাখ লিচু। এতে খুচরা ব্যবসায়ীরা শুধু যশোরেই প্রতিদিন ভোক্তাদের প্রায় চার লাখ টাকা ঠকাচ্ছেন।
মুদি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বাজারে লিচু উঠার পর প্রায়দিন দোকান থেকে ফেরার পথে ১০০ লিচু কেনেন। এভাবে প্রায় দশ দিন বাসায় লিচু আসার পর লিচুর সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয় তার স্ত্রী তানজিলা খাতুনের। একদিন গুনে দেখেন, ১০০ লিচুর আঁটিতে আছে ৮৩টি। ১৭টি লিচু কম।
একই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেন পালবাড়ির গৃহিনী সেলিনা খানম, পন্ডিত পুকুর পাড়ের ইনামুল কবির ও সরকারি কর্মকর্তা রাজু আহম্মেদ। তবে সদরের নুরপুর গ্রামের তৌফিকুর রহমান পিয়াস বলেন, ‘আমি বোকা নই। আমি জানি, লিচু ব্যবসায়ীরা সবসময় লিচু কম দেয়। তাই প্রথমে লিচুর দোকানে গিয়ে লিচুর স্বাদ কেমন এই কথা বলে দুইটা লিচু খেয়ে ফেলি। তারপর নিজ হাতে গুণে গুণে লিচু নিয়ে আসি। আসার সময় ৫টা লিচু বোনাস হিসেবে নিয়ে আসি।’ লিচু ব্যবসায়ীদের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচার জন্য তার পদ্ধতি অনুসরণ করে লিচু কেনার পরামর্শও দেন তিনি।
দড়াটানা মোড়ের খুচরা লিচু বিক্রেতা রাজ হোসেন জানান, অনেক সময় লিচু বোঁটা থেকে ঝরে পড়ে। এ জন্য কম থাকে। সংখ্যায় লিচু কম দেয়ার কথা স্বীকার করেন পালবাড়ি পুরাতন বাজারের খুচরা লিচু বিক্রেতা জাবেদ হোসেন, চৌরাস্তার আলমগীরও।
এ প্রতারণা সম্পর্কে যশোর জজকোর্টের অ্যাডভোকেট কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোন ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময় প্রতিশ্রুতি পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করলে তিনি এক বছর পর্যন্ত কারাদ- বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
তিনি আরোও বলেন, বাজার মনিটরিং সেল বা কর্তৃপক্ষ যদি বাজার মূল্য/দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করেন, তবে তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
এ ব্যাপারে যশোর ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব জানান, লিচু কম দেয়ার তথ্য পেলে বা বাজার তদারকিতে এর সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।