সাজেদ রহমান
ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই বোঝা যাচ্ছিল যুদ্ধ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি সৈন্যরা যে কোন মুহুর্তে যশোর ছেড়ে পালিয়ে যাবে। এমনও শোনা গিয়েছিল যশোরের পতন হয়েছে। খবরের সূত্র ছিল ওয়েস্টার্ন কমান্ড থেকে।
‘যশোরের কি পতন হয়েছে?’। এই শিরোনামে যুগান্তরে আর একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ৬ ডিসেম্বর। এতে বলা হয় ‘ব্লাক আউটের কলকাতা কিন্তু ঝিমিয়ে পড়েনি। বাড়িতে বাড়িতে রেডিও-ট্রানজিস্টার খুলে লোকেরা অধীর আগ্রহে যুদ্ধের খবর শুনতে ব্যস্ত। রাত তখন আটটা। ওয়েস্টার্ন কমান্ডের এক সূত্র থেকে হঠাৎ এক খবর এসেছিল, যশোহরের পতন হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে কি উল্লাস। এলাকা দখলের আনন্দ নয়। আসলে কলকাতার মানুষ আওয়ামী লীগের কর্মীদের বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের ও মুক্তিফৌজের ওপর খুনি সেনাদের নির্মম অত্যাচারের কাহিনী এতদিন শুনে আসছে, আহতদের দেখেছে। তারা ভুলতে পারছে না। অতএব সাধারণ মানুষের মনে সে এক দারুন ক্ষোভ। খুনি সেনারা উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। এই তাদের শান্তি।
কিন্তু পরে দিল্লীর এক সংবাদে বলা হয়েছিল: যশোহর পতনের খবর তখনও পাকাপোক্ত হয়নি। আবার কিছুক্ষণের জন্য সকলের মনে হাতাশা। কিন্তু আবার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছে, যশোহর পতনের খবর এখুনি সরকারি ভাবে জানতে কর্তৃপক্ষ হয়ত চায় না। তাই তারা তা চেপে দিয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী যে দুর্বার গতিতে বাংলাদেশের ভেতরে একের পর এক ঢুকে পড়ছে আজ রবিবার সারাদিন ধরে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভারতীয় জেনারেলদের ওপর সবার দারুণ বিশ^াস। এদিন রাত ৯টা পর্যন্ত সবচেয়ে বড় খবর হচ্ছে বাংলদেশের ভেতরে আখাউড়া, পরে লাকসাম রেল জংশন দখল করে নেয়া হয়েছে। লাকসামের একদিকে কুমিল্লা, চট্রগ্রাম আর অন্যদিকে চাঁদপুর। আর একদিকে ঢাকার পথ। সকলে বলাবলি করছে ঢাকা কবে যাবে?
মানুষের কি গভীর আকাক্সক্ষা ও উৎসাহ। ঘুটঘূটে অন্ধকারের মধ্যে তারা এদিন রাতে দলে দলে খবরের কাগজের অফিসের সামনে এসে সর্বশেষ সংবাদ জানতে চেয়েছেন।
ভারতীয় সীমান্ত গ্রাম বয়রায় প্রথম ট্যাংক যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি যে বাংলাদেশের ভেতরে পাক বাহিনীর চেয়ে বেশি তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যশোহরের সত্যি সত্যি আইনগত ভাবে পতন হয়েছে কিনা তা আজ বড় কথা নয়। তবে যতদূর জানা গেছে, তাতে মনে হয়েছে এখানে খান সেনারা সর্ম্পূণভাবে পর্যদস্ত হয়েছে। হয়তো এখনও যশোহরের পতন হয়নি।
সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্কের কোন চিহ্ন নেই। বরং কিছু অহমিকা দেখা যাচ্ছে। দিল্লি, আগ্রা, পাঠানকোট, শ্রীনগর সব জায়গায় সাইরেন বাজলো। কিন্তু কলকাতায় তো কিছু হলো না। এমন কথা রাস্তায় লোকে বলাবলি করছে যে, তাহলে বাংলাদেশের ভেতরে হয়তো পাকিস্তানের কোন বিমান নেই। তারা আক্রমণ করবে কি করে?