বাংলাদেশ এ বছর বিজয়ের ৫০তম বর্ষ উদযাপন করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কেরও ৫০তম বছর উদযাপিত হচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আসন্ন বিজয় দিবসে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। উভয় দেশই এই সফরকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মনে করছে। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তিনি বুধবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা জানান।
ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে দুই দেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘতম স্থলসীমান্ত। রয়েছে সমুদ্রসীমা। তাই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যাও কম নয়। এর মধ্যে সমুদ্রসীমা, ছিটমহলসহ ছোট-বড় অনেক সমস্যাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, সীমান্তের বাকি সমস্যাগুলো সমাধানেও ভারতের জোরালো আগ্রহ রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ এবং নতুন প্রযুক্তি বিনিময়ে ভারতের আগ্রহের কথা তুলে ধরেছেন। এটি অনস্বীকার্য যে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো ও আন্তরিক। আর তার ফলে দুই দেশই উপকৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশই সমৃদ্ধির পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবও সে কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। এ দেশের এক কোটিরও বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান বাহিনীকে প্রতিরোধে এগিয়ে এলে ভারত তাদের সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছিল। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারতীয় বাহিনীও মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল। বাংলাদেশ ও ভারতের সেই যৌথ বাহিনীর সামনে টিকতে না পেরে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই যুদ্ধে ভারতেরও কয়েক হাজার সেনা হতাহত হয়েছিলেন। তাই এই দিবসটি দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং ভারতেও দিবসটি যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জানান, ভারত এ বছর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাদের মিশনগুলোতে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে।
এটা ঠিক, প্রতিবেশী দুটি দেশের সম্পর্ক যত বেশি ঘনিষ্ঠ, আন্তরিক ও সহযোগিতামূলক হবে, দুটি দেশই তত বেশি উপকৃত হবে। তাই সম্পর্কের বাধা হিসেবে এখনো যে সমস্যাগুলো অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সেগুলোর সমাধান করতে হবে। পারস্পরিক প্রচেষ্টায় আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক জোটকে শক্তিশালী করে এই অঞ্চলের অন্য প্রতিবেশীদেরও উন্নতির অভিন্ন সোপানে নিয়ে আসতে হবে। উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো গতিশীল করতে হবে। আমরা আশা করি, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো শক্তিশালী হবে।