নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের চৌগাছার স্বরুপদহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে জমির খাজনা দিতে যাওয়া বা কাজে যাওয়া ব্যক্তিদের নানাভাবে হয়রানী এবং অনৈতিকভাবে বিপুল অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২৪মে ইউনিয়নের বাঘারদাড়ী গ্রামের সোহরাব হোসেন শ্রাবণ এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, তার বিরুদ্ধে এরকম আরও অভিযোগ রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তাকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযোগকারীর মুখোমুখি করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।
লিখিত অভিযোগে সোহরাব হোসেন বলেন, আমি স্বরুপদহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে খাজনা পরিশোধের জন্য যোগাযোগ করি। আমি নিজে গত রমজান মাসে একবারসহ মোট তিনবার ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে যাই। তিনি আমাকে বলেন দুটি দাখিলার জন্য ৯ হাজার টাকা দিতে হবে। একপর্যায়ে গত ২২ মে বিকেল তিনটার দিকে আমি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে তিনি জানতে চান কত টাকা এনেছেন। আমি বলি কত দিতে হবে। তিনি বলেন, আগেই তো বলে দিয়েছি। আমার কি মনে থাকে? ৯ হাজার টাকা বলে দিয়েছিলাম। একপর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তিনি দুটি দাখিলা প্রদান করেন। ৫ হাজার টাকা নিলেও তিনি আমাকে একটি দাখিলার ৬৬৬ টাকা এবং অন্য দাখিলার ১৮২ টাকার অনলাইন দাখিলা সনদ প্রদান করেন। আমি জাহাঙ্গীর আলামের এহেন অপকর্মের বিচারসহ আমার অতিরিক্ত নেয়া টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সোহরাব হোসেন বলেন, আমি প্রায় তিন মাস ধরে তার পেছনে ঘুরছি। তিনি বলেন, খতিয়ানের সব জমির খাজনা পরিশোধ করতে হবে। আমার কাছে তিনি ৯ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি দিতে না চাওয়ায় তিনি ঘুরাতে থাকেন। পরে গত রোববার পাঁচ হাজার টাকা দিলে তিনি বলেন, এ নিয়ে আবার ওপরে কোথাও যাবেন নাতো। আমি যাবো না বলার পর তিনি আমাকে ৮৪৮ টাকার দুটি অনলাইন দাখিলা প্রদান করেন। সোহরাব হোসেন আরও বলেন, একই সময়ে অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক-দেড় হাজার টাকার খাজনা দেয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।
বাঘারদাড়ী গ্রামের কৃষক অহেদ আলী বলেন, এই নায়েব টাকা ছাড়া কিছু চেনেন না। তার কাছে জমির খাজনা দিতে গেলেই বলেন, কত টাকা এনেছেন। এ কারণে জমির মালিকরা খাজনা দিতে চান না।
স্বরুপদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহিদুজ্জামান সবুজ বলেন, টাকা ছাড়া তিনি কোন কাজ করেন না।
চৌগাছা পৌরসভার তারনিবাস গ্রামের বাসিন্দা ও তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হাসিবুল ইসলাম বলেন, এর আগে যিনি ছিলেন, তিনি খুব ভালো লোক ছিলেন। তবে জাহাঙ্গীর আলমের নামে অনেক বদনাম।
স্বরুপদহ গ্রামের সোহেল রানা বলেন, শুধু টাকা আর টাকা ছাড়া তিনি কিছুই চেনেন না।
ইউনিয়নের জিওলগাড়ি-বেলেমাঠের বাসিন্দা এবং ইতালি প্রবাসী বিশ^াস ফারুক হোসেন লাল্টু বলেন, তিনি টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না। চরম দুর্নীতিগ্রস্থ এই জাহাঙ্গীরকে স্বরুপদহ থেকে দ্রুত অপসারণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে আগেও এ ধরনের অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযোগকারীকে ডেকে মুখোমুখি করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই কর্মচারীদেরকে দিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকে পাঠান।
মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলেন, এমন ঘটনা আমার স্মরণে নেই। একই দিন অন্য একজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেয়ার কথা বলা হলে তিনি বলেন ‘মাশাআল্লাহ’। একপর্যায়ে তিনি জানতে চান আপনি কোন পত্রিকার সাংবাদিক?
ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগের কথা বলা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। ইউএনও আপনাকে ডেকে পাঠাননি বা আপনার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাননি? তিনি বলেন, না আজকে ইউএনও আমাকে ডাকেননি বা কিছু জানতেও চাননি।