জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বাজারে সয়াবিনের উত্তাপের পর এবার পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচের ঝাঁজ বাড়ছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার যশোরের বাজারে মানভেদে পেঁয়াজের কেজিতে দাম চড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর কাঁচা মরিচ বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ক্রেতাদের অভিযোগ- ব্যবসায়ীদের কারিসাজিতে বেড়েছে দাম। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন এলসি বন্ধ হওয়ার কারণে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এমনিতে ভোজ্য তেলের বাজার গরম, তারপর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর জেনে মধ্য আয়ের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
পবিত্র মাহে রমজানের মধ্যেই সয়াবিনের দর নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু অসাধু চক্রের লাগাম টেনে ধরা যায়নি। উল্টো সমন্বয়ের নামে সরকার দাম বাড়িয়েছে। এনিয়ে তুমুল হইচই হচ্ছে। এরই মধ্যে ঝাঁজ ছড়িয়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ। মশলা জাতীয় এই দুই পণ্যের ঝাঁজে চোখে-মুখে ঝাপসা দেখছেন ক্রেতা। ভারত থেকে আমদানি বন্ধের ঘোষণা আসা মাত্রই পণ্য দুটির দাম বেড়েছে।
বুধ ও বৃহস্পতিবার যশোরের বাজারে মানভেদে পেঁয়াজের কেজিতে দাম চড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। কম দামের পেঁয়াজের চেহারা ও গুদাম পচা গন্ধই জানান দিচ্ছে অধিক মুনাফার আশায় এসব পেঁয়াজ মজুত করেছিল অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। শহরের ছোট বাজার গুলোতে পেঁয়াজের দাম আরও বেশি। সেই সাথে কাঁচা মরিচের দামও চূড়ায় তোলা হয়েছে।
আব্দুল জলিল নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে চোখ বন্ধ করে দাম চাইলেই পাওয়া যায়। ২০/২৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজে এক লাফে ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘটনাকে তিনি ‘ডাকাতি’ বলে অভিহিত করেন। বলেন, শুধু পেঁয়াজ না, ৫০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ কিনতে হচ্ছে ১শ’ টাকায়।
মেস ছাত্রী অরিন ও বৈশাখী রায় বলেন, বাজেটের বাইরে চলে গেছে পণ্যের দাম। কিন্তু মেসের অন্যান্যরা শিক্ষার্থীরা বাস্তব চিত্র বুঝতে চান না। যেকারণে সহপাঠিদের মধ্যে মনোমালিন্য হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্টেশন বাজারে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সেখানে পেঁয়াজের দর হাকানো হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা। কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে দেখা যায় ৩০ টাকা পোয়া। অর্থাৎ প্রতিকেজি উঠেছে ১২০ টাকায়।
শংকরপুর গোলপাতা মজসিদ এলাকার রিকশাচালক লোকমান হোসেন বলেন, সরকার গরীব মারার ফাঁদ পেতেছে। বাঁচানের পথ দেখছি না।
শহিদুল ইসলাম ভাংড়ি হাড়ি-পাতিল ও প্লাস্টিক পণ্য কিনে বেচাবিক্রি করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সয়াবিন তেল কেনা কমিয়েছি। এখন পেঁয়াজ ও মরিচ কেনাও কমাতে হবে। বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে বলেও জানান শহিদুল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আড়ত ব্যবসায়ী জানান, গত কয়েক বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এবার একটু আগেই বাড়িয়ে দিলো আমদানিকারকরা। তিনি বলেন, ৫ মে পত্রপত্রিকায় খবর আসে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরই পেঁয়াজের দাম চূড়ায় উঠেছে। অন্যদিকে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ঝাল চাষের ক্ষতি হয়েছে। এই ছুতো ধরে বাড়ানো হয়েছে কাঁচা মরিচের দাম। লাগামহীন দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতা সোহেল হোসেন ও সনজিৎ রায় বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ ও মরিচ আমদানি বন্ধ হলে পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তাদের দাবি- পাইকাররা তাকিয়ে থাকে ভারতের বাজারের গতিবিধির দিকে। এবারও সেটাই হয়েছে।
চুয়াডাঙা বাসস্ট্যান্ড বাজারে কথা হয় লুৎফর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, কিছু ডিলার ও পাইকার যেভাবে তেল মজুত করে সংকট তৈরি করেছে, ঠিক একইভাবে একই পথে হাঁটছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ীরা। আমদানি বন্ধ হলেই দেশি পণ্যের দাম বাড়বে কেন- প্রশ্ন ছুঁড়েন লুৎফর।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব দৈনিক কল্যাণকে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবরে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে দাম। দ্রুতই অভিযান চলবে কাঁচাবাজারে। আর গুদাম পচা গন্ধের পেঁয়াজ কোথা থেকে বাজারে আসছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে গেছে। যেকারণে সাময়িকের জন্য পণ্যটির দাম বেড়েছে।