শাহরুল ইসলাম ফারদিন, এ্যান্টনি অপু, পাপিয়া মল্লিক ও আব্দুল্লাহ আল সোহান: এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ৬ নভেম্বর রোববার। বরাবরের মতোই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের ভিড় কেন্দ্রে কেন্দ্রে। এ ভিড়ের মধ্যে আরেক দুর্ভোগ কোচিং সেন্টারের কর্মীদের প্রচারণা।
এসব প্রতিষ্ঠানের লোকজন পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও অপেক্ষারত অভিভাবকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে জোরপূর্বক তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন একগাদা লিফলেট-প্রোসপেক্টাস। কোচিং সেন্টারসহ নানা নামের শিক্ষা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানের এ রকম প্রচারে বিরক্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে যশোর শহরের ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, মণিরামপুর সরকারি কলেজ, মণিরামপুর মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন কেন্দ্রের বাইরে দেখা গেছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের কর্মীরা একে একে সব অভিভাবকের কাছে যাচ্ছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও অফারের নামে তাদের প্রলোভন দেখান। এরপর অভিভাবকদের হাতে তাদের প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিবরণীসহ রং বেরঙের লিফলেট জোরপূর্বক তুলে দেন। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীর বিষয়ে সব তথ্য ও অভিভাবকদের তথ্যসহ মোবাইল ফোনের নম্বর নেওয়া হয়। এসব লিফলেট যে পরে অভিভাবকরা সংরক্ষণ করছেন তা নয়। কেউ কেউ হাতে রাখছেন বটে।
কিন্তু বেশির ভাগই একটু চোখ বুলিয়ে ফেলে দেন রাস্তায়। ফলে রাস্তা ছেয়ে আছে এসব লিফলেটে। অনেক অভিভাবক আবার সেগুলো ফুটপাতে বিছিয়ে তাতে বসে থাকেন, কেউবা পাখার মতো নাড়িয়ে নিজেকে বাতাস দেন। রোদ ঠেকাতে মাথার উপর দিয়ে রাখেন কেউ।
অভিভাবকদের হাতে এগুলো বিলি করছেন ওরাকাল নার্সিং, আইকন প্লাস, আইরিশ, ইউনাইটেড, কার্নিয়া ইত্যাদিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টারের কর্মীরা।
লিফটলেট বিতরণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশির ভাগই পরীক্ষার সময়ের জন্য নিযুক্ত হয়েছেন। কোচিং সেন্টারের স্থায়ী কর্মীও আছেন তাদের সঙ্গে। কারিমুস সাকিব, তালহা আহমেদ, খন্দকার রুবাইয়া, নাজমুল হুসাইন, শরিফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন লিফলেট বিতরণ কাজে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, দৈনিক মজুরিতে তারা কাজ করছেন।
তার কাজ শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত তথ্য নেওয়া এবং তাদের পরিবারের মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করা। সেই সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো। আর একটি করে প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিবরণী হাতে ধরিয়ে দেওয়া। পরীক্ষার দিনগুলোতে তাকে এই কাজ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মীরা বলেন, দৈনিক কাজ ভিত্তিতে তার পারিশ্রমিক হিসেবে দুই থেকে চারশত টাকা বেতন ধরা হয়েছে। পার্টটাইম এমন কর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরাও কাজ করছেন বলে জানান তারা।
এদিকে পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকেন সন্তানরা। আর বাইরে থাকেন তাদের উদ্বিগ্ন অভিভাবক। কেমন পরীক্ষা হচ্ছে, কি লিখছেন সন্তানরা তা নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তার শেষ থাকে না। এমন সময় রীতিমতো অত্যাচার করে কোচিং সেন্টারের লোকজন।
যশোরের রমজান ম-ল নামে এক অভিভাবক বলেন, তার সন্তান সিটি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। তারা তিন-চারজন অভিভাবক প্রতি পরীক্ষার দিন কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষায় থাকেন। কোচিং সেন্টারের লোকজনের দৌরাত্ম্যে তারা অতিষ্ঠ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোচিং সেন্টার মিথ্যা ও অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। গত বছর মিম নামে এক শিক্ষার্থী মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। তার ছবি ব্যবহার করে একাধিক কোচিং সেন্টার নিজেদের শিক্ষার্থী দাবি করে। বাণিজ্য করতে এমন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয় কোচিং সেন্টারগুলো। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে কোন তদারকি করে না।
তবে আইরিশ কোচিং সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুর রহমান গোলাপ বলেন, তারা জোর করে লিফলেট দেন না। যে নিতে চান তাকে দেওয়া হয়। ওরাকল নার্সিংয়ের ম্যানেজার আনোয়ার বলেন, আমরা কর্মীদের বলেছি জোরপূর্বক এগুলো না দিতে। আমরা এ বিষয়ে আরও অভিযোগ পেয়েছি। এরপর যাতে তাদের কর্মীরা এমন না করেন সেজন্য সচেষ্ট থাকবো।
যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম দৈনিক কল্যাণকে বলেন, আমি এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানাবো। এছাড়া আমি নিজেও তদারকি করব।