আবুল কাশেম জিয়া, রাজগঞ্জ: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের অঞ্চলের পারখাজুরা বাঁওড়ের নওলতা ঘাটে নির্মিত হচ্ছে তৃতীয় ভ্যাসমান সেতু। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন পারখাজুরা বাঁওড়ের ওপারের একটি গ্রাম। এ গ্রামে বসবাসকারী ৫০ হাজার মানুষকে একটু সেতুর অভাবে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয় রাজগঞ্জ বাজারে। বছরের পর বছর জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেদের উদ্যোগেই পারখাজুরা নওলতা ঘাটে বাঁওরের ওপর তৃতীয় ভাসমান সেতু নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।
এ সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ১৩০ ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে নওলতা ঘাট এলাকায় খেয়াঘাটের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে প্লাস্টিকের ব্যারেল, স্টিল সিট, অ্যাঙ্গেল ও রেলিং দিয়ে তৃতীয় ভাসমান সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। রাজগঞ্জ বাজারের বিশ্বাস ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্কশপ রবিউল ইসলাম ১২ফুট প্রস্থ ও ১২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এ সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে।
ইতিমধ্যে সেতুটির ৩০ শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে। নেতুটি নির্মাণে ২৫০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন প্লাস্টিকের ১৪৪০টি ব্যারেল এবং ১৮০টন স্টিল ব্যবহারে নির্মিত সেতুটির ধারণ ক্ষমতা ৩ টন বলে জানিয়েছেন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক রবিউল ইসলাম। সেতুটিতে থাকছে ৬০টি পন্টুন। বিশ্বাস ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, এই সেতুটিই দেশের সবচেয়ে বৃহত ভাসমান সেতু। এর আগে ঝাঁপা বাঁওড়ে নির্মিত সেতু দু’টির দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৭৫০ ও ১০০ ফুট। এই সেতুটি অন্য দুই সেতুর থেকে বেশি মজবুত ও আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হচ্ছে। সেতুতে ব্যবহৃত লোহায় যাতে সহজে মরিচা না ধরে তার জন্য ব্যবহার করা হচ্চে জাহাজে ব্যবহৃত রঙ। এ সেতুর মাঝামাঝি অংশ ৫ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে বাঁওড়ে নৌযান চলাচলে কোনো সমস্যা না হয়।
পারখাজুরা বাঁওড়ের কারণে মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চালুুয়াহাটি ও মশ্মিমনগর ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও রয়েছে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি পোস্ট অফিস, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। গ্রামের বাসিন্দা কাবিল ও ইন্তাজ বলেন, সাংসারিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাজগঞ্জ ও মণিরামপুর যেতে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের উদোগেই সেতু নির্মাণের কাজ হাতে দিয়েছে দুই পারের বাসিন্দারা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, খেয়া পার হতে অনেক সমস্যা ওঠা নামা করতে কষ্টে হয়। তাছাড়া খেয়ার জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। সেতু নির্মাণ হলে আমাদের আর এত কষ্ট করতে হবে না। একটি সেতুর জন্য রাজনৈতিক নেতা,সাংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে,বহু কান্নাকাটি ধন্যা দিয়েছি কিন্তু দেই-দিচ্ছি করে। তারা আমাদের হতাশ করেছেন তাই নিজেরাই নিজেদের উদ্যোগে সেতু তৈরি করছি। এসেতু আমাদের টাকায়, আমাদের শ্রমে নির্মিত হচ্ছে, এটাই আমাদের গর্ব।
সেতু নির্মাণ কাজের মূল তদারককারী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, এলাকাবাসীদের নিয়ে নিজেদের অর্থে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের এ স্বপ্নের সেতুটির উদ্বোধন করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন: লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি : কৃষিমন্ত্রী