নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় এলাকায় ২১টি দিঘি খনন করতে যাচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে দিঘি খননের চেয়ে আনুষাঙ্গিক খাতে অধিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে খনন কাজের ব্যয়ও বেশি ধরা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির অভাব দীর্ঘকালের। এছাড়াও ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডর, ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৩ সালের ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, ২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ফণী ও বুলবুল এবং ২০২০ সালের সুপার সাইক্লোন আম্ফানে উপকূলীয় সুপেয় পানির উৎসগুলো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি মহাসংকটে রূপ নেয়।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় নদ-নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাঁধ কেটে লবণ পানি প্রবেশ, অনিয়ন্ত্রিত চিংড়ি চাষ, নদী প্রবাহে বাঁধা, নদী-খাল দখলসহ নানাবিধ কারণে যুগ যুগ ধরে সুপেয় পানির সংকট অব্যাহত রয়েছে। তাই পুকুর ও দিঘি খনন করে ভূ-উপরস্থ পানি সংরক্ষণ করা আবশ্যক। সরকারি ও খাস জমিতে পুকুর বা দিঘি খনন করা যেতে পারে, যেগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যাবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে উপকূলীয় অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকট মেটানো সম্ভব।
ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় পানির বিশালতা থাকলেও মিঠা পানির উৎস এবং প্রাপ্যতার ভিত্তিতে সংকট সব সময়ই ছিল। আর খুলনা জেলার দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, তালা ও আশাশুনি উপজেলা এবং বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলাগুলো সুন্দরবন এবং সমুদ্র সংলগ্ন হওয়ায় মিঠা পানির সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। অধিকাংশ স্থানেই ভূ-গর্ভে খাওয়ার যোগ্য পানির স্তর না পাওয়ায় গভীর নলকূপ চালু করা যায় না।
অগভীর নলকূপের পানিতে রয়েছে মাত্রতিরিক্ত লবণাক্ততা ও আর্সেনিক দূষণ। এলাকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণের জন্য পুকুর ও রেইনওয়াটার হারভেস্টিং প্ল্যান্ট হচ্ছে ভরসা। বৃষ্টির পানি ধারণ করে তা এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। আবার অপরিকল্পিত চিংড়ির চাষ ও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে স্থানীয় পুকুরগুলোর অধিকাংশই মিঠা পানির আধার হিসাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
কিছু কিছু এলাকায় রেইনওয়াটার হারভেস্টিং প্ল্যান্ট থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এই এলাকার অর্ধেক জনগোষ্ঠী বৃষ্টির পানি ও পুকুরের পানি ফিল্টার করে পান করে। বাকি অর্ধেক পুকুরের পান করে ফিল্টার ছাড়াই। ফলে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির সংকট চলছেই। দিঘি ঘনন করে বৃষ্টির পানি সংক্ষণ করে এই অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকট মেটানো সম্ভব। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাপাউবো, আইডব্লিউএম এবং সিইজিআইএস গত বছরে গঠিত কারিগরি কমিটির সুপারিশে এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডিপিপি অনুসারে প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে, প্রকল্পের আওতায় ২১টি দিঘি খনন বাবদ মোট ৪৫ কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭টি দিঘির জন্য ১২ কোটি এক লাখ ১৯ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। ১৩টি দিঘির জন্য ১৯ কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার টাকা এবং একটি দিঘির জন্য ১৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
প্রকল্পের রাজস্ব খাতে সম্মনি, গাড়ি ভাড়া, সেমিনার ও কনফারেন্স, জরিপসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য মোট ৯৮ লাখ ২৫ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মূলধন খাতের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য ৯ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি পরিশোধনের জন্য ৪টি দিঘিতে ২টি করে এবং ১৭টি দিঘিতে একটি করে সর্বমোট ২৫টি পন্ড স্যান্ড ফিল্টার স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। দিঘির সুপেয় পানি সংগ্রহ, সুষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৪টি দিঘিতে ২টি করে এবং ১৭টি দিঘিতে একটি করে সর্বমোট ২৫টি ঘাটলা নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনোভাবেই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ব্যয় করার সুযোগ নেই। আমাদের সদস্য (সচিব) সহ কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দেওয়া আছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই কেবল ব্যয় অনুমোদনের সুপারিশ দেবেন।’
আরও পড়ুন: ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ডের শুকনো রেইনট্রি গাছে মৃত্যুর শংকা