কল্যাণ ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা বেশ উদ্বেগের সঙ্গে চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠিক কতটা দ্রুত ও বিপজ্জনকভাবে বিস্তার লাভ করছে তা বুঝতে চাইছেন। ১শ ৪০ কোটি মানুষের দেশ চীনে অপর্যাপ্ত টিকাদান এবং সংক্রমণের বড় ঢেউ সামাল দিতে দেশটির স্বাস্থ্যখাত কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালে কোভিড-১৯ এ দেশটিতে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সেখানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি খারাপ হলে তার নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কর্মকর্তারা এই সংকট প্রশমনে চীনকে সহায়তা করতে আগ্রহী। তারা সহায়তার পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, আমরা তাদের বলতে চাই, তারা যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবেই তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি। চীনের বাইরের দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, যাদের নিজ নিজ দেশে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আছে তারা বলছেন, রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতের উপর যখন চাপ বাড়বে তখন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে আগেভাগে তার প্রস্তুতি নেওয়া, সংক্রমণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং তা ভাগ করে নেওয়া এবং যোগাযোগের পথ খোলা রাখা করোনাভাইরাস সংক্রমণের বড় ঢেউ মোকাবেলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চীনে এইসব উপাদানের অনেকগুলোতে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন তারা।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন তার সরকারের ‘জিরো-কোভিড’ নীতি চীনে কোভিড মহামারী সামাল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া পশ্চিমা টিকার তুলনায় চীনের আবিষ্কার করা টিকা অনেক ভালো। কিন্তু তার এই দাবির সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতি পুরোপুরি মেলেনি। ‘জিরো-কোভিড’ নীতির মাধ্যমে চীন ভাইরাস সংক্রমণকে আটকে রাখতে পারলেও টানা তিন বছর ধরে কঠোর লকডাউন দেশটির সাধারণ মানুষ আর মেনে নিতে পারছিল না। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ফলে গত দুই-তিন মাসে চীনের কয়েকটি অঞ্চলে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ হয়। যার কারণে এ মাসের শুরুতে চীন সরকার লকডাউনের বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল করতে বাধ্য হয়।
লকডাউন বিধি শিথিল করার পর সেখানে ভাইরাসের বিস্তার দ্রুত গতিতে হচ্ছে বলে আশঙ্কা দেশটির বাইরের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। যদিও বিধি শিথিল করার পরও গত মাসের তুলনায় এ মাসে চীনে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের হার হ্রাস পেয়েছে। তবে হাসপাতালগুলোতে জ্বর আক্রান্ত মানুষের লাইন লম্বা হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিধি শিথিলের পর গণহারে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে চীনে এখন দৈনিক শনাক্ত কম পাওয়া যাচ্ছে, যা দেশটির প্রকৃত চিত্র নয়।
আগামী বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ওই সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য এ মাসের শুরুতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছিলেন। সেখানেই তারা কীভাবে বর্তমান কোভিড মহামারী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করছেন বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য দিতে তিনি রাজি হননি।
সিএনএনর প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমা কর্মকর্তারা চীনকে সম্ভাব্য যেসব সহায়তা দিতে চাইছে তার মধ্যে একটি হতে পারে জার্মানির প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের কোভিড টিকার উন্নত ভার্সন ‘এমআরএনএ’ দেওয়া। বর্তমানে করোনাভাইরাসের যে ধরনগুলো বিস্তার লাভ করছে সেগুলোর সবই ওমিক্রন ধরনের উপধরণ। এমআরএনএ টিকা বিশেষ করে ওমিক্রন ধরনকে লক্ষ্য করেই প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, চীনের তৈরি কোভিড টিকার তুলনায় সেটি অনেক বেশি কার্যকর হবে।
গত মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বেইজিং সফর করেন। তার সঙ্গে ছিলেন বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর শাহিন। তারা সেখানে টিকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জার্মানি টিকা দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখালেও যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা অন্যান্য দেশ চীনকে খোলাখুলিভাবে এমআরএনএ টিকা নিতে উৎসাহ দিচ্ছে না। বেইজিংও বিদেশি সহায়তা নিতে আগ্রহী নয়। বরং তারা বলেছে, তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সুবিধা নিয়েই এই মহামারী অতিক্রম করতে পারবে। চীনে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ১১ লাখ এবং ইউরোপের ২১ লাখের তুলনায় অনেক কম।
আরও পড়ুন: ৪০ বছরের জেল হতে পারে ট্রাম্পের