নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের বাঘারপাড়ায় মামলা দিয়ে ১৬ পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। জমি নিয়ে বিরোধ এক পরিবারের সাথে অথচ মামলায় জড়ানো হয়েছে ১৬ পরিবারের ২১ সদস্যকে। দিনমজুর, স্কুল ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য, ইজিবাইক-অটোভ্যান চালক কেউই বাদ যায়নি মামলার হাত থেকে। কোনো ঘটনা ঘটলেই ঠুকে দেন মামলা। এ অভিযোগ উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের শামছুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের বাসিন্দা টিপু সুলতান তাদের পৈত্রিক জমি বন্টনের জন্য সার্ভেয়ারের মাধ্যমে মাপজোক করে শামছুর রহমান ও টিপু সুলতান পরিবারকে যার যার জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হয়। এর পর টিপু সুলতানের ভাই মিজানুর রহমান সীমানা পিলার বসাতে গেলে শামছুর রহমানের ভাই ইলিয়াস, রাজ্জাক, আসাদ ও তাদের ছেলেসহ ১৫-২০ জন ধারালো দা, বাঁশের লাঠি ও লোহার রড নিয়ে তার উপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করে।
এ সময় তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে প্রতিবেশি ইসমাইল হোসেনসহ ৬ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন টিপু সুলতান। ঘটনার ৪ দিন পর ২১ জনের নাম উল্লেখ ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত করে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলা করেন শামছুর রহমান। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা অধিকাংশই ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
আনিচুর রহমান ও খালেক শ্রমিক হিসেবে মাঠে কাজ করছিলেন, মহাসিন ইজিবাইক ও হৃদয় অটোভ্যান চালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তারিন দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছিলেন রায়পুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে এমন আরো অনেকে ঘটনাস্থলে না থেকেও আসামি হয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য জামির হোসেন ও স্থানীয় প্রতিবেশি আজাহার আলী থানা পুলিশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থেকেও আসামি হয়েছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রতিবেশী ১৬ পরিবারের সদস্যদের নামে করা হয়েছে মামলা।
শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, শামছুর গংদের ভয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে সাহস পায় না। জমি দখল, মারামারি, সাধারণ মানুষকে হুমকি ধামকিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিরোধপূর্ণ জমি যেখানে আছে, শামছুর গং সেখানেই আছে। কয়েক বছর আগে ইলিয়াস ও শামছুরসহ তারা ৫ ভাই মিলে তাদের আপন মামাতো ভাই আব্দুল হাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আদালত তাদের ৫ ভাইকেই যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন।
পরে উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে খালাস পায়। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পদসাধু নামে এক সংখ্যালঘু পরিবারকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করে তার জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন। ইলিয়াস পরিবারের পাশাপাশি তার আত্মীয় স্বজনও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত রয়েছেন। ইলিয়াসের শ্যালক রামকান্তপুর গ্রামের ওয়াদুদ শেখেরবাথান গ্রামের তরিকুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল চালককে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ওয়াদুদ দীর্ঘদিন কারাভোগও করেন।
বাঘারপাড়া থানায় করা মামলার বাদী টিপু সুলতান জানিয়েছেন, শামছুর-ইলিয়াসদের সাথে দীর্ঘদিন জমি নিয়ে বিরোধ আমার পরিবারের। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মাপজোকের মাধ্যমে জমি বন্টন করে দেন সার্ভেয়ার। ইলিয়াসরা জমি বন্টন মেনেও নিয়েছিলেন। আমাদের অংশে আমার ভাই সীমানা পিলার বসাতে গেলে অতর্কিত হামলা চালায় ইলিয়াস পরিবার।
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করি। কিন্তু চার দিন পরে জানতে পারি তারা আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এমনকি মামলায় আমার প্রতিবেশী, স্কুল ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যসহ ২১ জনের নাম দেয়া হয়েছে।
বিরোধপূর্ণ জমি বন্টনে যশোরের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম হোসেন জানান, স্থানীয় চারজন সার্ভেয়ার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দু’পক্ষকে জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। দু’পক্ষ সীমানা বুঝে নেয়। শুনেছি পরে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে করা মামলার বাদী শামছুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

